জেনে নিন ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার শীর্ষক আলোচনা করেন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম!
জেনে নিন ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার:
আগামী শতাব্দী ফিজিওথেরাপির। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরিসীম। মেকানিকাল, লাইফ স্টাইল সমস্যা গুলো ঔষধে সারেনা কিন্তু যোগ/ ফিজিওথেরাপিতে হয়।
আজ আমরা আপনাদেরকে ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করবো:-
ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকারঃ সম্পর্কে জানালেন প্রজ্ঞা ফিজিওথেরাপি সেন্টার এর স্বাধিকারী, ডাঃ মনা ইয়োগা ওয়ার্ল্ড এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান প্রশিক্ষক ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা। লিখেছেন ভেড়ামারা অনলাইন প্রেসক্লাব প্রতিনিধি –
আজকের বিষয়ঃ ঘাড়ে ব্যথার কারণ ও প্রতিকারঃ
আমাদের বেশির ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগেন। মেরুদণ্ডের ঘাড়ের অংশকে সারভাইক্যাল স্পাইন বলে। মেরুদণ্ডের ওপরের সাতটি কশেরুকা ও দুই কশেরুকার মাঝখানের ডিস্ক, পেশি ও লিগামেন্ট নিয়ে সারভাইক্যাল স্পাইন বা ঘাড় গঠিত। মাথার হাড় (স্কাল) থেকে মেরুদণ্ডের সপ্তম কশেরুকা পর্যন্ত ঘাড় বিস্তৃত। আট জোড়া সারভাইক্যাল স্পাইন নার্ভ (স্নায়ু) ঘাড়, কাঁধ, বাহু, নিচু বাহু এবং হাত ও আঙুলের চামড়ার অনুভূতি ও পেশির মুভমেন্ট প্রদান করে। এ জন্য ঘাড়ের সমস্যায় রোগী ঘাড়, কাঁধ, বাহু ও হাত বা শুধু হাতের বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। ঘাড়ের সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের বেশি হয়।
ঘাড়ে সাধারণত দুই ধরনের ব্যথা হয়: যেমন:
১. লোকাল বা স্থানীয় ব্যথা
২. রেফার্ড পেইন বা দূরে ছড়িয়ে যাওয়া ব্যাথা।
ঘাড়ব্যথার কারণ:
অনেকগুলো কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
১. সারভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস
২. সারভাইক্যাল রিবস
৩. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া
৪. সারভাইক্যাল ডিক্স প্রলেপস বা হারনিয়েশন, যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে
৫. মাংসপেশী, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি
৬. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা বা অনিদ্রা
৭. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ ও ক্ষয়
৮. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ
৯. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস
১০. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস
১১. ফাইব্রোমায়ালজিয়া
উপসর্গ:
১. ঘাড়ব্যথা এবং এই ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে
২. কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব
৩. বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে
৪. সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে (স্টিফনেস) আছে এবং আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে
৫. ঘাড়ের মুভমেন্ট ও দাঁড়ানো অবস্থায় কাজ করলে ব্যথা বেড়ে যায়
চিকিৎসা:
ঘাড়ব্যথার চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসার মূল লক্ষ হল,
১. ব্যথা ও অন্যান্য উপসর্গ নিরাময় করা
২. ঘাড়ের মুভমেন্ট স্বাভাবিক করা।
ওষুধ:
লক্ষণ অনুয়ায়ী হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন ব্যবহার করতে পারেন।
আবার বিশেষজ্ঞ এলোপ্যাথিক চিকিৎসক এর নিকট ও যেতে পারেন।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা:
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াবিহীন আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।
এখানে বিভিন্ন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ এবং বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট; যেমন-
ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রো-ওয়েভ ডায়াথারমি,আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন, ট্রান্সকিউটেনিয়াস ইলেক্ট্রিক্যাল স্টিমুলেশন ইত্যাদি। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুই-তিন সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।
অপরদিকে ফ্রী হ্যান্ডে যোগও মিরাকল ফলাফল পাওয়া যায়।
সার্জিক্যাল চিকিৎসা:
কনজারভেটিভ বা মেডিক্যাল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
করণীয়:
১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।
২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।
৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।
৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।
৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) পজিশন বন্ধ করা।
৭. অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম কমাতে হবে।
৮. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।
৯. কাত হয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।
১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।
১১. দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার না করা।
১২. নিয়মিত প্রাণায়াম যোগ করুন।
যোগ, ফিজিওথেরাপি এবং চিকিৎসা সেবা নিতে
ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা
০১৭১২২৭৬৭৫৩
Devoloped By WOOHOSTBD