• বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
নওগাঁয় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের আন্তঃ জেলা বৈঠক অনুষ্ঠিত দাঙ্গাবাজদের রোষানলে কলিয়ারকাপনের সম্ভ্রান্ত পরিবার পাঁচটি সাংবাদিক সংগঠনের সমন্বয়ে নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠন কপিলমুনি আর্ট একাডেমি পরিদর্শন করেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক জনাব সফিউল ইসলাম বাদাঘাট বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন সভাপতি নজরুল শিকদার সাধারণ সম্পাদক হারুন আর রশিদ বিজয়ী ডাঃ মনা ইয়োগা ওয়ার্ল্ড আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণ বিশ্বম্ভরপুর থানা পুলিশের অভিযানে মাদক কারবারি গ্রেফতার। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণার্থীদের জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পরিদর্শন নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠন তাহিরপুরে ভারতীয় ইয়াবাসহ যুবক আটক

মাধবীলতা

Zakir Hossain Mithun / ৪১৯ Time View
Update : বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৩

মাধবীলতা

–ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা

এটি একটি সত্য ঘটনা “ব্যর্থ স্বামীর আত্ননাদ “এর গল্প কাহিনী থেকে নেয়া। গল্প টি পাঠকদের হৃদয় টার্চ করবে আশাকরি।
আগুন এবং মাধবীলতা দুইজনে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। কোল জুড়ে ১ টি ফুটফুটে সন্তান ও এসেছে। উভয় খুব ভাল। উভয় উভয়কে খুব ভালবাসে। কেউ কাউকে হারাতে চাই না,,,। সুখেই চলছিল তাদের সংসার।

হটাৎ করেই অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পরিচিত হয় ক্লাস বন্ধু ফেরদৌসের সাথে। প্রথমে তারা ক্লাস নিয়েই কথাবার্তা বলতো। পরবর্তী তে কথা বলতে বলতে ফ্রী হয়ে যায় বলে প্রায় সুখে দুঃখের কথাও তাদের মধ্যে আলোপ আলোচনা হতো। মাধবীলতা মনের ভুলেও বুঝতে পারিনি তার বন্ধু ফেরদৌস তাকে পাওয়ার বাসনায় কাতর। তুই তুমি বলেই কথা বলতো তারা। ফেরদৌস মাধবীলতা কে নিয়ে অনেকগুলো চিঠি লিখেছিল তারমধ্যে থেকে ১ টা নিম্নরূপ —

মাধবীলতা

প্রিয় মাধবীলতা,
ব্যস্ততার কারণে সময়মত খোঁজ নেয়া হয় না, ভাল আছ তো? এত চাপ, এত স্ট্রেসের মাঝে তোমার নিজের যত্ন নিচ্ছ তো? ঠিকমতো খাচ্ছো? রাতে ঘুম হচ্ছে তো? শুধু বাকিদের নিয়ে ভাবলেই কি হবে নাকি!? একটু আমার কথাও ভাবো। আমি তোমার শর্তে রাজি। আমি তোমার বরের চেয়ে ও বেশী ভালবাসবো এবং জয়ী হবো কথা দিলাম। তোমার আহবান গুলো আমার হৃদয় স্পর্শ করে। তোমার পাঠানো গানটার মত কবে যে তোমায় ক্ষতবিক্ষত করবো,,,?
জানো, মাঝে মাঝে আমার দম বন্ধ লাগে! খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে, অসম্ভব একা লাগে! মনে হয় কি জানো, এই দুনিয়াটা আমার জন্য নয়! তখন আমি তোমার কথা ভাবি। কত কষ্ট, দুঃসহ অতীত কে তুমি জয় করেছো যুদ্ধ করে, কত ধৈর্য তোমার। এই তুমি তো আমারই অংশ, তবে আমি কেন পারব না!? আমি হার মানব না, কখনোই না! কারণ, কোন যন্ত্রণাই আমার মনের শক্তি থেকে বড় হতে পারে না!

প্রিয় মাধবীলতা, একদিন সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে, তাই না? আমরা সুখী হবো! তোমার সব চাওয়া পূরণ করবো। সুখ নিশ্চয়ই আসবে, তাই না?
প্রিয় সেই দিনের অপেক্ষায় –
তোমারই আমি…।
এভাবেই চলতো দিনের পর দিন তাদের কথোপকথন….।

 

আজ শুক্রবার মাধবীলতার স্বামী বাড়িতে থাকায়
স্বামী বাজারে গিয়ে স্ত্রীকে ফোন করছে, কিন্তু নাম্বার ওয়েটিং,,, স্বামী বাসায় এসে স্ত্রীর ফোনটা হাতে নিয়ে ম্যাসেন্জারে দেখতে পায় ফেরদৌস নামের একজনার সাথে যোগাযোগ,,,। লেখা গুলো দেখার পর স্বামী খুব কষ্ট পেলো,,,।

মাধবীলতা
স্ত্রীকে সালাম দিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করলেন
কেমন আছো??
স্ত্রী বলল ভাল, স্বামী বলল, তোমায় ফোন
করেছিলাম, কিন্তু নাম্বার ওয়েটিং ছিলো, কোথায় কথা বলছিলে, স্ত্রী বলল আমার কাকীর সাথে,,,,
স্বামী বলল, আমার আল্লাহ
সুবহানাহু তায়ালা আদেশ করেছেন
সত্য বলার জন্য, যদিও তোমার জীবন বিপন্ন হয়ে
যায়, আর বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে, তখন
তাহার মিথ্যা কথার দুর্গন্ধে ফেরেশতা ১
মাইল দূরে চলে যায়। আর আল্লাহর রাসূল বলেছেন,
আমার উম্মত কখনো মিথ্যাবাদী হতে পারেনা।
স্ত্রী কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল, আমার
এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম তোমাকে নিয়ে,,,? স্বামী এসএমএস গুলোর কথা জানতে চাইলে সে চোখে মুখে মিথ্যা বললো এটা বুঝতে পেরে রাগে কষ্টে স্বামীর মাথা ফেটে যাচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল মাটি ফাক হোক আমি ঢুকে যায়। ঐরাতেই স্বামী সুইসাইড করার চিন্তা মাথায় নিলো,, পরে আবার ভাবলো তাহলে তো পরকাল হারাতে হবে,,,।
স্বামী বলল দেখ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা, স্বামী স্ত্রীর
সম্পর্ক হালাল, আর তুমি যে ছেলের সাথে এসব ভাষায় আহবান সূচক কথা বলেছো,,,, এমন ছেলেদের সাথে কথা বলা হারাম মহাপাপ,,,। আমি তো তোমাকে ঐ ছেলে সম্পর্কে আগেই বলেছিলাম ও ভালোনা তারপর ও কি করে পারলে এমন করতে,,,?
তুমি কি জানো জান্নাত কোথায়?
স্ত্রী বলল না,
স্বামী বলল, হুজুর পাক (সাঃ) বলেছেন, জান্নাত তোমার দু উরু ও দু চোয়ালের মধ্যেখানে, যে ব্যক্তি এই
দুটি জিনিসের হেফাজত করবে, সে জান্নাতি।
স্বামী নামাজে দাঁড়ালেন, নামাজ
শেষে স্ত্রীর জন্য দোয়া করলেন, ইয়া আল্লাহ
তুমি যদি হযরত ওয়াশী( রাঃ)মতো কঠিন
হৃদয়ের মানুষকে, দ্বীনের বুঝ দিতে পারো,
হযরত উমার ফারুক (রাঃ) মতো কঠিন
মানুষকে দ্বীনের বুঝ দিতে পারো, তাহলে
আমার স্ত্রীকে ও তুমি হেদায়েত দাও,,,, ইত্যাদি।
স্বামী সারারাত না ঘুমিয়ে চোখের জল আর স্ত্রীর সাথে এসএমএস বিনিময় করলো বাট স্ত্রী তখনও মিথ্যাচার করে ঘটি বুজ দেয়ার চেষ্টা করছিল। স্বামীকে অসুস্থ দেখার পরও স্ত্রীর কোন মাথাব্যথা নেই দেখে স্বামী খুব কষ্ট পেলো এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো। বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবলো তার মুখোমুখি হবো। তখনই গিয়ে তার মোবাইল টা হাতে নিয়ে আবার চেক করতে লাগলো, স্ত্রী তার এসএমএস গুলো ডিলিট করে দিয়েছে এনিয়ে তখনও পাল্টা কাউন্টার দিতে লাগলো অমনি রাগে কষ্টে সন্তানের সামনে গায়ে হাত তুললো। মার খাওয়ার পর একটু নরম হলো। বুঝানোর চেষ্টা করে বের হয়ে গেলো স্বামী,,,।
স্ত্রী স্বামীর পেরেশান দেখে একটু নমনীয় হয়ে মনে মনে চিন্তা করলো আমি যার সাথে কথা বলি সে তো, এই মানুষের জুতা টানার যোগ্যতা নাই,,, সব কিছু জেনেও আমাকে এতোটা ভালবাসে।
আর নয়, আজই তওবা করবো, আর স্বামীর
পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো।
স্ত্রী তার স্বামীর কাছে ক্ষমা চাইছে, স্বামী বলছে, আমি জানি তুমি অবুঝ, তাই ভূল করেছো, আল্লাহ তোমায় হেফাজত করুন, স্বামী তাহার স্ত্রীকে
বুকে টেনে নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে, আল্লাহর
দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো এবং বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবী কেমন তাদের সাথে মিশলে কি ক্ষতি হবে সব আয়নার মত বুঝালো,,, হাইরোডে উঠলে পাল্টে যাবে,,,, হারিয়ে যাবে (এমন কয়েকটি বাস্তব উদাহরণসহ) ইত্যাদি বলে মাধবীকে বুঝালো বুকের মধ্যে নিয়ে।
স্বামী ও একসময়ের ডাংগাবাজ হলেও বর্তমানে তারমত ছেলে পাওয়া আমাদের সমাজে আজকাল বিরল। এমন ছেলে পাওয়াই কষ্টকর, আমার স্ত্রীর জিদ অহংকার এর কারণে এত সুন্দর সংসার ভেংগে যেতে বসেছে। স্বামী মন কে বুজালো আমার স্ত্রী তো আর ফেরেশতা নয়, তার ভূল গুলো সুধরে নিতে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার অনুরোধ জানান।
স্বামী আল্লাহর কাছে দোয়া করে এমন ভুল যেন কোন স্ত্রী না করে। সকল স্বামীর সকল স্ত্রী কে হেদায়েত দান করো। আমার স্ত্রী মাধবীলতা কে ও হেদায়েত দান করো। নেক হায়াত এবং সুস্থতা দান করো। তার রাগ জিদ অহংকার সন্দেহ প্রবণতা কে দুর করে দাও। আমিন।

মাধবীলতা
এভাবে ২ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলে ফেরদৌস মাধবীর নম্বর বন্ধ পাওয়ায় তার স্বামীকে ফোন দিলে স্বামী ঠান্ডা মাথায় স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে। কথার একপর্যায়ে ফেরদৌস কে বলে মাধবী বিবাহিতা এটা জানার পরও কি করে পারলে তাকে জালে জড়াতে,,,,। সে প্রথমে না জানার ভান করে অবাক হয়। মাধবীর স্বামী তখন ফেরদৌস কে তাদের কথোপকথন এর এসএমএস গুলোর সব কথা দেখেছে জানালে সে তাৎক্ষণিকভাবে চোখ উল্টিয়ে সব দোষ মাধবীর ঘাড়ে চাপায় এবং বলে তার রুগী দেখতে সহায়তা,,, একাকিত্ব দুর করার জন্য এবং আপনাকে ভুলে থাকার জন্য সে তার কথায় রাজি হয়েছে। আমি কিছু বলিনি সেই আমাকে প্রতিনিয়ত তার কাছে যাবার জন্য আহবান করতো,, আপনার মতো হতে বলে,,,,,,ইত্যাদি। আমি আপনার ভয়ে কুষ্টিয়াতে যায়নি। তানা হলে তার আহবানে কবে সাড়া দিতাম। এক কথায় সে ধোয়া তুলসী আর সব দোষ মাধবীর। ফেরদৌসের সব কথাগুলোর রেকর্ডের কিছু অংশ যখন মাধবীকে শোনালাম তখন মাধবীর চোখ দিয়ে অঝরে অশ্রু ঝরছিল,,,। শুধু একটা কথায় কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল বন্ধু তুই বড় অপরাধী রে। আমার সাদা গায়ে কাদা লাগালি। আমাদের ভিতর খারাপ কোন সম্পর্ক নেই তারপর ও নিজে বাঁচতে সব দোষ আমায় দিলি,,,,,।

পরিশেষে স্বামী কে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করে মাফ চেয়ে নিলো সালমা। জীবনে আর এমন ভুল করবেনা বলে তওবা করলো।
আল্লাহ তাদের কে সুখে শান্তিতে রাখুক এই হোক পাঠক সামাজের কাছে প্রার্থনা।

মাধবীলতা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Devoloped By WOOHOSTBD