নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় গর্ভধারীনি এক মায়ের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। জেলার মান্দা উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের মিরপুর এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলামের এখন দিন কাটছে নানান আতঙ্কে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের মা খোতেজান বিবি বাবা খলিলুর রহমানের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই সংসারে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পিতামাতা বিহীন নজরুল শৈশব কৈশোর কেটেছে তার মামা বাড়িতে। জীবনের নানান অসংগতি আর প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পাড়ি জমাম প্রবাসে। দীর্ঘ ২২ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে কয়েকবছর আগে ফিরে আসেন দেশে। তবে ওই সংসারে জন্ম নেওয়া দ্বিতীয় পুত্রের করা বিভিন্ন অন্যায় অত্যাচারে জরাজীর্ণ খতেজান ফিরে আসেন নজরুলের কাছে। ভালোই চলছিল দিনকাল। তবে কিছুদিন পর নিজ নামের যাবতীয় সম্পত্তি নজরুলের নামে লিখে দিতে চান মা খতেজান। নজরুল প্রথমে রাজী না হওয়ায় স্থানীয় গন্য মান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় পুত্রের অশালীন আচরণের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে মা খতেজান এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে একরকম জোরপূর্বক ভাবেই সম্পত্তির দলিল করতে রাজী হন নজরুল। এর কিছু দিন পর নজরুলের সৎ ভাই অর্থাৎ খতেজান বিবির দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে বিদেশে যাওয়ার জন্য নজরুলের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেন মা। পরে জমি বন্দক নেওয়ার নাম করে ১ লক্ষ টাকা নেন মা খতেজান বিবি। সম্প্রতি মা ছেলের বিশ্বাসের অটুট বন্ধনে ধরে ফাটল। হঠাৎ মায়ের দেওয়া যাবতীয় সম্পত্তি ফেরত চান তিনি। তবে এতে নজরুল ইসলাম সৃষ্টি করতে চায়নি কোন সংঘাতের, সম্পত্তি ফেরত দিতে চাইলেও তার কাছ থেকে নেওয়া দফায় দফায় প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ফেরত চাইলেই ঘটে বিপত্তি। টাকা ফেরত দিতে নারাজ খতেজান বিবি হুমকি দিচ্ছেন আত্মহত্যার, ইতিপূর্বে বিশপানে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন খতেজান।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি বিদেশ থেকে আসার পর মা আমার ছোট ভাইকে বিদেশে পাঠানোর জন্য আমার কাছে টাকা চান, আমি সরল মনে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। পরে আবাদি জমি বন্দক নেওয়ার কথা বলে ১ লক্ষ টাকা চান, সেটাও দিয়েছি। এরপর আমার ছোট ভাই (সৎ ভাই) বিদেশে গেলে তার সাথে সম্পর্কের অবনতির কারণে আমাকে তার যাবতীয় সম্পত্তি লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এতে আমি রাজী না হলে পরে এলাকার মুরুব্বি, মাতবরদের ডেকে এক বৈঠকে মা বলেন যে, তার ছোট ছেলে তার সাথে অশালীন আচরণ করেন, অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন, তিনি তার সম্পত্তি আমাকে লিখে দিতে চান। এতে আমি রাজি ছিলাম না। পরে একরকম জোরপূর্বক ভাবেই সম্পত্তি আমার নামে দলিল করে দেন মা। বর্তমানে হঠাৎ জমি ফেরত চান মা, আমি ফেরত দিতে সর্বদা প্রস্তুত, এতে আমার কোন দুঃখ নেই। কিন্তু আমার কাছ থেকে মা দফায় দফায় টাকা নিয়েছেন, জমির খাজনা, দলিল করতে বেশ মোটা অংকের টাকা খরচ হয়েছে যা সবমিলিয়ে প্রায় ৭ লক্ষ। আমি আমার এই টাকা ফেরত চাইলে মা নানান ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরি করছেন। গতকয়েকদিন আগে বিশ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখান থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পর মা এখন সুস্থ, কিন্তু আমি ভুগছি নিরাপত্তা হীনতায়। এছাড়া আমার বাড়ির সামনে আমার মামাতো ভাই জোরপূর্বক ভাবে গাছ লাগিয়ে যান, এবং হুমকি দেন কোন প্রকারে উক্ত গাছের কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে। এখানে ছোটছোট বাচ্চারা খেলাধুলা করে, অজান্তেই তারা যদি গাছের কোন ক্ষয়ক্ষতি করে তাহলে হয়তো তারা ভাববে আমিই গাছ নষ্ট করেছি। সবমিলিয়ে বর্তমানে বিভিন্ন হুমকিতে, নিরাপত্তা হীনতা, আতঙ্কে দিন কাটছে আমার এবং আমার পরিবারের।
এব্যপারে স্থানীয় বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, জোরপূর্বক ভাবেই সম্পত্তি নজরুল ইসলামের নামে লিখে দিয়েছেন মা খতেজান বিবি। তবে বর্তমানে সে জমি ফেরত চাচ্ছেন এবং আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে এবং আত্মহত্যা চেষ্টা করে আতঙ্কের মধ্যে রেখেছেন নজরুল ইসলামকে।
স্থানীয় মাতবর ও প্রবীন ব্যক্তি লুৎফার মন্ডল বলেন, এব্যপারে কোনকিছুই আমার অজানা নয়, খতেজান বিবিআমাদের উপস্থিতিতে ছোট ছেলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে নজরুলের নামে তার যাবতীয় সম্পত্তি লিখে দেন। বর্তমানে বিভিন্ন অমানবিক কাজকর্মের মাধ্যমে নজরুলকে কোনঠাসায় ফেলার চেষ্টা করছে।
এব্যপারে অভিযুক্ত খতেজান বিবির সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে একাধিক বার তার মুঠোফোনে ফোন করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
Devoloped By WOOHOSTBD