সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে কৃষকদের অংশগ্রহণে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ মেরামত ও পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠন করা হয়েছে। পাউবোর নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ইউনিয়নে করা হয়েছে গণশুনানি।
বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে পিআইসি নিয়ে নানা জটিলতা থাকলেও এবছর প্রকৃত কৃষকদের অংশগ্রহণে পিআইসি গঠনে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা ফসল রক্ষা বাঁধ মনিটরিং কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে যাচাই বাচাইয়ের মাধ্যমে ৭৬টি প্রকল্পের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ৩০টি প্রকল্পের জন্য পিআইসির খসড়া তালিকা প্রকাশ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম। কয়েকদিনের মধ্যেই বাকি কমিটিগুলো প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
মহালিয়া হাওর পাড়ের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রকাশিত ৩০টি পিআইসি দেখে বিগত বছরের তুলনায় এবারের পিআইসি গঠনে স্বচ্ছতা লক্ষ্য করা গেছে। কারণ প্রকাশিত পিআইসিতে প্রকৃত কৃষক স্থান পেয়েছে। এবছর কৃষকদের মতামত নেয়া হয়েছে। এবং বিভিন্ন ভাবে উপজেলা মনিটরিং কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাই করা হয়েছে। প্রতি বছর এভাবে প্রকৃত কৃষকের মাধ্যমে পিআইসি গঠন হলে বাঁধের কাজে অনিয়ম দুর্নীতি কমে যাবে।
প্রকাশিত পিআইসি’র তালিকায় নাম আসা উপ-প্রকল্পের সভাপতি রতনশ্রী গ্রামের রব্বানী বলেন, আমি প্রকৃত কৃষক হওয়া সত্যের বিগত বছরে পিআইসি পাইনি। কারণ পিআইসি পেতে হলে ৮০হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা দিতে হয়েছে নেতাদের। আমি টাকা দিতেও পারিনি পিআইসির কাজও পাইনি। এবছর আবেদন করেছি যাচাই বাছাই করে কোন প্রকার টাকা ছাড়াই আমার নাম তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে বাঁধের কাজ করার চেষ্টা করবো।
শনির হাওর পাড়ের কৃষক সামরুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের ধূসররা বিগত বছরগুলোতে পিআইসি বাণিজ্য করেছে। টাকা ছাড়া কোন পিআইসি হয়নি। তারা পিআইসি বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা কামিয়েছে। আওয়ামীলীগ পতনের মাধ্যমে সারা দেশের ন্যায় পিআইসি থেকেও তাদের অশুভ ছায়া সরে গেছে। এবার সঠিক নিয়মে প্রকৃত কৃষক পিআইসি পাচ্ছে। তবে দূর থেকে এখনও আওয়ামী ধূসররা বিভিন্ন প্রপাকণ্ডা ছড়াচ্ছে। তারা বিভিন্ন ভাবে ষড়যন্ত্র করছে কিভাবে কাজের ধারাবাহিকতা বিনষ্ট করা যায়। এদের প্রতিহত করতে কৃষকদের সজাগ থাকতে হবে। তাছাড়া দুর্নীতি মুক্ত পিআইসি কমিটি গঠন করায় ইউএনও সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
শ্রীপুর দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, কৃষকদের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে নীতিমালা অনুযায়ী প্রকৃত কৃষকদের অংশগ্রহণে এবছর পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এবিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম মহোদয় কঠিন ভাবে দেখছেন। আশা করছি বিগত বছরের তুলনায় এবার শতগুণ ভালো হবে।
তাহিরপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, এবছর প্রতিটি ইউনিয়নে গণশুনানি করে প্রকৃত কৃষক বাচাই করে পিআইসি করা হয়েছে। ইউএনও মহোদয় সহ আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে বাঁধের কাজ সম্পন্ন করার।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, মনিটরিং কমিটি নিয়ে প্রকৃত কৃষক যাচাই বাছাই করতে গিয়ে পিআইসি গঠনে একটু বিলম্ব হয়েছে। ইতিমধ্যে ৩০টি পিআইসির খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বাকি পিআইসি তালিকাও দুএক দিনের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে কোন ধরনের অনিয়ম সহ্য করা হবেনা।
Devoloped By WOOHOSTBD