রুহুল আমীন খন্দকার, বিশেষ প্রতিনিধি :: নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) ৬ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগের (সিটিটিসি) সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে একটি চৌকস অভিযানিক দল।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ : মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। ১৯৮৮ সালে আফগান যুদ্ধে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানে যান। এরপর তিনি আফগানিস্তানে ট্রেনিংয়ে শেখেন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা। ওই সময়ে ফখরুল আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ডিজিটাল ফরেনসিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.) রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিজিটাল ফরেনসিক টিম। অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা ফখরুল ইসলামসহ সংগঠনটির ৬ (ছয়) সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিটিটিসি জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রম বিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার হন। এর ফলে হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে যায়। কিন্তু এই ফখরুল ইসলাম হুজির সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তিনি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করেন। ওই হামলার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চেয়েছিলেন যে হুজি এখনও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।
আজ শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গ্রেপ্তারকমত হুজি সদস্যরা হলো যথাক্রমে, ১/ মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), ২/ মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), ৩/ মো. সুরুজ্জামান (৪৫), ৪/ হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), ৫/ মো. দীন ইসলাম (২৫), ৬/ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজত থেকে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত নয়টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গ্রেপ্তার ফখরুল পাকিস্তানে গিয়ে মুফতি জাকির নামে একজনের মাধ্যমে আল কায়েদার সদস্য হন। এরপর অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিখে আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আবারও পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে ফিরেছেন। ফখরুল অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনায় পারদর্শী।
আসাদুজ্জামান আরও জানান, ফখরুল ১৯৮৮ সালে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় দারোয়ানের চাকরি করতেন। পরে ১৯৮৮ সালে কাজের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানের করাচি যান। পাকিস্তানে অবস্থানকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মুফতি জাকির হোসেনের সঙ্গে পরিচিতি হন। মুফতি জাকির হোসেন যিনি পাকিস্তানের করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মুফতি জাকির আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের কমান্ডার।
জাকির ফখরুল ইসলামকে জিহাদের দাওয়াত দিলে তিনি দাওয়াত গ্রহণ করেন। ফখরুল জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে দীর্ঘকালীন প্রশিক্ষণ নিতে যান। সেখানে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র-অক ৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন ফখরুল।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন ফখরুল। অনুশীলনের সময় একে ৪৭-সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় চার ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক পাহারা দিতেন ফখরুল। এই সময়ে আলকায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ হয় তার। তিনি আফগানিস্তানে বিভিন্ন মেয়াদে জিহাদি ট্রেনিং করার পর পুনরায় পাকিস্তানের করাচিতে ফিরে আসেন। করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় তিন বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফিরে ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে আসেন।
আসাদুজ্জামান আরও জানান, গ্রেপ্তার হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মামুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সিকিউরড এনক্রিপটেড অ্যাপস দিয়ে ‘মোরা সত্যের সৈনিক’ এর ‘অস্থায়ী মুসাফির’ ছদ্মনাম ধারণ করে গ্রুপটি চালাতেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন এই অ্যাপসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতেন।
তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার মাধ্যমে তার সংগঠনের পরিচিত দুই একজনকে হাতে কলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশ্যে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেন। গ্রেপ্তাকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
RUHUL AMIN, DHAKA-28/01/2023
Devoloped By WOOHOSTBD