নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ নওগাঁর সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের গণিগাছ গ্রামের মো. বেলাল হোসেনের ছেলে ওবায়দুল হোসেন মৃধাকে তার আপন পুত্র দ্বারা ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে।
প্রায় ১০ বছর আগে ওবায়দুল হোসেন মৃধার সাথে একই উপজেলার ঝাড়গ্রাম গ্রামের আফজাল হোসেনের ছোট মেয়ে কাজলি আক্তার বিথীর সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে সংসার করা কালে তাদের দুই পুত্র সন্তান হয়। সংসার করা কালে ওবায়দুলের সাথে বিথীর মনমালিন্য হলে তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। এর পরে মিমাংসার মাধ্যমে আবারও ২য় বার সংসার শুরু করেন। সংসার চলাকালে বিভিন্ন মনমালিন্যের কারনে বিথি আদালতে দুইটি মামলা ও থানায় দুইটি অভিযোগ করেন।পরবর্তিতে আবারো তাদের তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়। কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ওবাইদুলের কাছে থাকায় সেসব নেওয়ার জন্য বিথী চালাকির মাধ্যমে আবারো তার সাথে ঘড় করার জন্য রাজী হন। কিন্তু শর্ত ছিলো যদি তাকে ওবাইদুল সেইসব কাগজপত্র ফেরত দেন তাহলে আবার সে সংসার করতে রাজী আছেন। দুই সন্তান থাকায় বাধ্য হয়ে সেসব কাগজাদি ফেরত দিয়ে আবার তাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করে সংসার শুরু করেন। আবার সংসার শুরু করাকালে ওবাইদুলকে বাধ্য করে ঘড়জামাই হিসাবে রাখা হয়। সেই সময় তিনি ঘড়ের খাট,এলইডি টিভি,ফ্রিজসহ সংসারের যাবতীয় জিনিসপত্র ক্রয় করেন এবং শশুরবাড়িতে থেকে সংসার করতে থাকেন। কিছুদিন যেতেনাযেতেই ওবাইদুলের স্ত্রী কাজলী বোনের বাড়িতে বেড়ানোর কথা বলে ঢাকাতে চলে যান। ঢাকায় যাবার পর বিভিন্নভাবে সুকৌশলে ওবাইদুলের সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং নানান প্রয়োজনের কথা বলে বিকাশে,নগদে,ডাসবাংলার মাধ্যমে প্রায় দুইলক্ষ টাকা নেন। ঢাকায় যাবার সময় একটি ভিভো মোবাইল,নগদটাকা নিয়ে যান। পরে আবার নানান সমস্যার কারনে আবারো ছাড়াছাড়ি হয়। কাজলী টিকটক করতো এবং শহরে থেকে বিলাসীতাভাবে জীবনযাপন পছন্দ করতো। তাই তাদের মধ্যে আবারো ছাড়াছাড়ি হয়।
কিছুদিন যাবার পর ওবাইদুল পাওনা টাকার জন্য চাপদিলে তারা টাকা নাদিয়ে নানান কৌশল অবলম্বন করেন। ওবাইদুল বলেন, আমার বড় ছেলে আব্দুল্যা আল নাফিকে দিয়ে গত ৬/০৮/২৩ তারিখে একটি অপহরন মামলার নাটক করেন। আমার ছেলেকে দিয়ে তার মা, খালা – খালু এবং নানার বাড়ির লোকজন মিলে নাফিকে স্কুলে পাঠানোর কথা বলে তার খালুর সাথে পাঠিয়ে দেন এবং নাফির খালু নাফিকে নিয়ে নজিপুর নদীরধারে নিয়ে যান এবং কিছু পয়জেন জাতিয় ঔষুধ মিশিয়ে স্পিট খাওয়ায়ে তাকে রেখে চলে আসেন ।পরে এলাকাবাসি ও ওবাইদুলের বড় ভাইরাভাই তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় আনেন। এবিষয়ে নাফি বলেন,আমি আমার স্কুল রংধনু কিন্ডারগার্টেনে না যেয়ে ঐদিন সকালে আমি নওহাটামোড় পর্যন্ত যাই। নওহাটা মোড় থেকে আমাকে আমার খালু মামুন মহাদেবপুর উপজেলার কালিশহর এলাকার নদীর বাঁধ ( নজিপুর) সংলগ্ন এলাকায় ঘুরতে নিয়ে যায়। ঘুরতে নিয়ে গিয়ে আমাকে আমার খালু মামুন স্পীটের বোতলে করে ভিটামিন এর কথা বলে কিছু খাওয়ায়। খাবার পর থেকে আমার মাথা ঘোরা শুরু হয়। ওষুধ আনার কথা বলে খালু চলে যায়। মাথা ঘুরতে ঘুরতে আমি প্রায় অচেতন হয়ে পরিলে ওখানকার কিছু লোকজন আমার মাথায় পানি দেন এবং আমার মায়ের নতুন নাম্বার আমাকে মুখস্থ্য করতে বলেছিল সেই নাম্বারে ফোন করে বলি। বলার পরে আবার আমার খালু আমার কাছে যায় এবং আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এঘটনার ৭/৮ দিন আগে আমার খালু মামুন এবং খালা আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলো যে, বাবা আমাকে অপহরন করেছে এসব কথা বলার জন্য।
ঘটনাটি অনুসন্ধানকালে স্কুল পড়ুয়া নাফী প্রথমে তার বাবা ওবায়দুলের বিরুদ্ধে কথা বলেন। পরবর্তীতে অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা ফাঁস হওয়ার ভয়ে থানায় তরিঘরি করে বাদী পক্ষ বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন। নিষ্পত্তির পরে অভিযুক্ত নাফীর বাবা ওবায়দুলকেই তার দুই ছেলের দায়িত্ব দেন থানা পুলিশ। এখন সেই নাফীর কাছে তার বাবাকে ফাঁসানোর কথা জানতে চাইলে বলেন, আমাকে আমার খালু মামুন ও খালা শান্ত যে ভাবে শিখিয়ে দিয়েছিল সে ভাবেই বলেছি।
থানায় অভিযোগকারী আফজাল হোসেন বলেন, আমার নাতিগুলোকে আমি খুব ভালোবাসি। এরকম দূর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি হতাশ হয়ে গেছিলাম তাই থানায় অভিযোগ করেছি এবং থানাতে মিমাংসা করে যার সন্তান তার কাছে দিয়ে দিয়েছি।
ওবায়দুল হোসেন মৃধা বলেন, আমার দুই ছেলেই নানার বাড়িতে থাকতো। স্কুলের যাবতীয় খরচ,পোষাক – আসাক সব আমি দিতাম। আমার বড় ছেলে আব্দুল্যা আল নাফীকে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে নেশা জাতীয় দ্রব্য স্পীটের বোতলে করে ভিটামিন এর কথা বলে পান করানোর যে অভিযোগ তুলেছে আমার বিরুদ্ধে, এনাটকের কারন হচ্ছে আমার সাবেক স্ত্রী কাজলি আক্তার বিথীর কাছ থেকে প্রায় ২ লক্ষ টাকা, স্বর্ণ, ফ্রীজ, এলিডি টিভি যেসব জিনিস আমার ছিল তাদের বাড়িতে ফেরত দিবে বলে আপোশ করা হয়েছিল। সেগুলো জিনিস পত্র এখানো আমি ফেরত পায়নি। ঐসব ফেরতের জন্য চাপ দিলে তারা আমাকে ফাঁসানোর জন্য এই পরিকল্পনা করেছে আমার সন্তাকে দিয়ে।শুধু তাই নয় আমার কাছ থেকে আরো টাকা দাবী করেন তারা, না দিলে অপহরন মামলায় তার অবস্থা খারাপ করে দেওয়া হবে।
ওবাইদুল বলেন,এই সাজানো অপহরন মামলার সুষ্ঠ তদন্ত শুরু হলে তারা বিষয়টি বুজতে পেরে তাড়াতাড়ি থানায় ডেকে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে বাচ্চা দুটিকে আমায় দিয়ে দেন।
এবিষয়ে নাফীর খালু মামুন হোসেন বলেন,ঘটনাটি নাফির বাবা ওবাইদুল ঘটিয়েছে। কিন্তু নাফি আপনাকে দোষ দিচ্ছে কেন, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, নাফিকে এসব বলার জন্য শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাহলে এমন বাবার কাছে সন্তানকে কেন রাখলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি এবিষয় নিয়ে আর কোন কথা বলতে চান না।
নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছিলাম বাদী ও বিবাদীদের সহযোগিতায় বিষয়টি মিমাংসা করে তার আপন বাবার কাছে বাচ্চাদের দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে বাচ্চার কোন সমস্যা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Devoloped By WOOHOSTBD