প্রথমত কথা আমি একজন নারী আর নারী মানেই একজন গোছালো পরিপূর্ণ নারী হয়ে ওঠা ।কারণ একজন নারীই পারে পরিবার টাকে এক সূত্রে বেঁধে রাখতে আর সেটি হলো তার যোগ্যতা ও গুণের মাধ্যমে। একটি মেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি যে কাজগুলি করা দরকার সেটি প্রথম মত ভুলে গেলে চলবে না। আমি সর্বপ্রথম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম জানিয়ে লেখাটা শুরু করছি কারণ তিনি একজন সফল নারী। তিনি দেশ পরিচালনা করেন এবং নারীদের পাশে থেকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন বিশেষ করে উদ্যোক্তাদের পাশে থাকেন সর্বদা ।তার পিতার সকল আশা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করেন। আবার নিজের কাজ নিজেই করেন। এটা আমাদের নারী জাতির গর্বের বিষয়। বেগম রোকেয়া নারীদের পড়ালেখার জন্য আন্দোলন করেছিলেন কিন্তু নারীদের গৃহের কাজ বন্ধ করার কোন আদেশ করেননি।
আমি একজন মেয়ে অর্থাৎ আমার ভিতর যে গুন গুলো বৃদ্যমান হাওয়া উচিৎ সেটি হল একটি পরিবারকে নিজের গুণ এবং যোগ্যতা সম্পূর্ণ দিয়ে এক সূত্রে বেঁধে রাখা। সেটি কিভাবে হওয়া উচিৎ শুধু কি পড়াশোনা? আর কিছু সার্টিফিকেট এর মাধ্যমে? এটি অর্জন করে কি লাভ? আমার বাবা বিদেশে থাকেন আমরা পাঁচ ভাই বোন আমি সবার বড় সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার জন্য বাগেরহাট জেলা থেকে খুলনায় প্রবেশ করি।
একটা প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন ক্লাস করে জানতে পারলাম আমি আমার প্রাপ্ত পয়েন্ট থেকে সব সাবজেক্টে পরীক্ষা দিতে পারবো না। অথচ সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সব জেনেও অর্থের জন্য আমাকে ভর্তি করে নিয়েছিলেন। আমি মনে করি একজন শিক্ষক হিসেবে তার এটা করা মোটেও উচিত হয়নি। যাইহোক আমার একটা শিক্ষা হয়েছে। আমি এখন থেকে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করব। নারী বলে যেন মানুষ দুর্বলতা সুযোগ না নেয়। অনেক অর্থ ব্যয় করে যখন আমি জানতে পারি আমি পরীক্ষায় দিতে পারছি না তখন আমার মনটা ভেঙে গেল।শুরু হলো চিন্তা।তখন জানতে পারলাম চারুকলায় পড়াশোনা করা যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে খুলনা আর্ট একাডেমির সন্ধান পেলাম। চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস স্যার প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। তার ওখানে ভর্তি হয়ে আমি যখন ক্লাস শুরু করি অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমি কিছুই পারি না। খুলনা আর্ট একাডেমির প্রাঙ্গণে নিয়মিত অনেক গুণীজনরা আসেন তখন দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিতে হয় এটা প্রতিষ্ঠানের রুলস। আমি তাদের সামনে ভালোভাবে কথা বলতেও পারিনা। তখন স্যার চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস ও সহকারি পরিচালক শিলা বিশ্বাস তাদের দুজনার কাছ থেকে আমি বইয়ের বাইরেও কিছু নৈতিক শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি ।যে শুধু পড়াশোনা করলে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। স্যার একটা কথা বলতেন একজন নারীর বৈশিষ্ট্য হওয়া উচিত ভাল রান্না করা কারণ তার স্বামী সন্তান পরিবারের সদস্যরা ঘরের পরিবেশে সুন্দর রান্নাটা পছন্দ করে। অফিস থেকে কষ্ট করে স্বামী বাসায় ফিরে বউয়ের হাতের রান্না খাওয়াটা প্রত্যাশা করে। প্রথম প্রথম আমার খুবই বিরক্ত লাগত কারণ ছোট থেকে কেউ কখনো কাজের প্রতি এভাবে দিকনির্দেশনা দেয়নি তাই কখনো জল গ্লাস ঢেলেও খাওয়া লাগেনি। রান্না করা তো দূরের কথা। এডমিশন পরীক্ষা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপ্নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও জীবনের সুন্দর একটি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো এমনটা উদ্দেশ্য করে আমার মনের অনুভূতি লিখে প্রকাশ করলাম। এই লেখার সাহসটুকু চিত্রশিল্পী মিলন বিশ্বাস স্যারের কাছ থেকে পেয়েছি , স্যার প্রতি ক্লাসে পরীক্ষা নিতেন। পরীক্ষার নিচে প্রত্যেকদিন শিক্ষা মূলক এক একটা বিষয়ের উপরে লিখতে দিতেন যে লেখাটা না লিখলে তার ফাইনের ব্যবস্থা ছিল। আমি একদিন না লিখে ৫০ টাকা জরিমানা দিয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম এখন থেকে যা পারি তাই লিখব। সেদিনকার থেকে শুরু করে আজ মনের ভিতরের লুকানো কষ্ট গুলো লিখে ফেললাম। জানিনা আমার লেখা কেমন হয়েছে তবে আমি অনুরোধ করব আমার ছোট বোনদের যারা আমার মত ছোট থেকে আদরে বড় হবে তারা ভুল করবে। একটা সময় পিতা-মাতা এবং পরিবারের সদস্যরা যে যার মত পৃথক হয়ে যাবে তখন বেঁচে থাকতে হলে অন্যকে খুশি রাখতে হলে মেয়ে হিসেবে সংসারের কাজগুলো শেখা অতি জরুরী। তাই আমি এখন থেকে নিজের কাজ নিজে করে জীবনকে গড়ার চেষ্টা করবো।তখন আমি নারীর মর্যাদা ও পরিচয় দিতে পারবো। সর্বশেষে প্রমাণিত হয় যে একজন নারী এবং তার ভূমিকা কি এবং পরিচয়টা অন্যরকম কারণ সে কোন না কোন এক পরিবারের মেয়ে অথবা বউ বা মা আবার পরিচয়টা এমনই। ওই এক পরিবারের অন্য সদস্য দের সঙ্গে অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে আছে তাই তাকে এটা ভাবা উচিৎ যে একজন পরিপূর্ণ নারী হয়ে উঠতে হলে কি শেখা দরকার আগে। খুলনা থেকে বাড়িতে এসে ভেবে নিলাম আজ থেকে মাকে সহযোগিতা করব।তাই বটি নিয়ে সাহস করে উশি কাটা শুরু করলাম ৫-৬ টা উশি নষ্ট করে ফেললাম। মা এসে দেখে হাসতে হাসতে অবাক।মা বলল তোকে দিয়ে হবে না। মনের ভিতরে যেন আরো জেদের অংশটা বেড়ে গেল। দুঘন্টা অতিবাহিত হল মাত্র ২টা উশি সর্বশেষ সুন্দরভাবে কাটতে পেরে খুবই আনন্দিত। আজ থেকে এই যে ঘরের দৈনন্দিন কাজের তালিকা ভাগ করে নিলাম ঘর গোছানো, রান্নায় সহযোগিতা, নিজের পোশাক নিজে ধৌত করা, বড়দের যত্ন করা,ছোটদের স্নেহ এবং শিক্ষা প্রদান করা। বড় হিসাবে সংসারের দায়িত্ব পালন করা। আমি চেষ্টা করব পড়াশুনার পাশাপাশি নারীর মর্যাদা রাখতে কারণ এখন আমাদের দেশে ইতিহাস জানার চেষ্টা করলে দেখা যাবে শতকরা ৮০ জন নারী স্বাবলম্বী কারণ তারা বিভিন্ন ভাবে উদ্যোক্তা হয়ে সংসার পরিচালনা করছেন। দেশের সুনাম বয়ে আনছেন এবং নারীরা কোন কিছুর থেকে পিছিয়ে নেই। দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি নারীরা পরিচালনা করেন এমনকি বিমান চালাতেও সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের নারীরা। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমিও আজ থেকে সত্য কথা গুলি স্মরণ করে চলবো। হয়তোবা এখন মনে করছি শিশু কাল থেকে যাদের সঙ্গে সঙ্গ দিয়েছি তারা সবাই ছিল অযোগ্য কারণ তারা কখনো মনের ভিতরে শিক্ষনীয় কোন কিছু তৈরি করে দিতে পারেনি। তাই আমি আমার ছোট ভাইকে দেখে অনুপ্রাণিত। আমার ছোট ভাই সে অনেক জ্ঞানী কারণ তাকে দেখি সব সময় অনেক বয়সী মানুষের সঙ্গে সঙ্গ দেয় এটা আমার ক