কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা তারাগুনিয়া গ্রামের মৃত আছের মন্ডলের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সফি’র স্ত্রী স্বীকৃতি পেতে দারে দারে ঘুরছেন ফিরোজা খাতুন ।
গত জুলাই মাসের ৩০ তারিখে তিনি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর লিখিত আবেদ করেছেন ফিরোজা খাতুন।
এ বিষয়ে ফিরোজা খাতুন (শুবারন) বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে আমার পিতা মাতা ও আবুল কালাম আজাদ সফির পিতা মাতার মতামতের ভিত্তিতে আমাদের বিয়ে হয়। আমার ঘরে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে তার নাম ময়েন উদ্দিন। বিয়ের পরে আমি তারাগুনিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে আমার স্বামী সহ ছেলে ময়েন উদ্দিন কে নিয়ে ভাড়ায় থাকতাম। পরে আমি আমার বাবার বাড়ি দাড়ের পাড়ায় আমি আমার স্বামী আবুল কালাম আজাদ সফি ও ছেলে ময়েন কে নিয়ে বসবাস করতাম। পরে আমার স্বামী ভেড়ামারা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে মিলাপজান নামে এক ব্যক্তির সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেখানে তার এক ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। আমি মুক্তিযোদ্ধার আবুল কালাম আজাদ সফির প্রথম স্ত্রী হওয়ার পরেও আমি সকল কিছু থেকে বঞ্চিত ।তাই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি ও সম্মানি পেতে আমি সরেজমিনে তদন্ত চেয়ে একটি আবেদন করেছি। কিন্তু আবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শহিদুল ইসলাম সরেজমিনে তদন্ত না করে তার অফিসে উভয় পক্ষেকে ডেকে নিয়ে তার মনের মত প্রতিবেদন দিচ্ছে। তাই বিষয়টি সরেজমিনে এসে সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত চাই আমি।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধার প্রথম সন্তান দাবি কারী ময়েন উদ্দিন বলেন, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সফি’ র প্রথম সন্তান আমি, যা উপজেলার তারাগুনিয়া, দাড়ের পাড়া ও ভেড়ামারা উপজেলায় মির্জাপুর গ্রামে যেখানে আমার বাবা দ্বিতীয় বিবাহ করেছিল সেখানে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করলে পাওয়া যাবে। এই তিন এলাকার প্রায় মানুষ জানে আমি কার সন্তান। আমার বাবা আবুল কালাম আজাদ সফি দির্ঘ দিন আমাকে আমার দ্বিতীয় মা মিলাপজানের কাছে রেখে ছিল। আমি মুক্তিযোদ্ধা প্রথম সন্তান হলেও আমি সকল সুযোগ সুবিধা থাকে আমি বঞ্চিত। আমি আমার দ্বিতীয় মায়ের সন্তানদের টাকা-পয়সার কাছে হেরে যাচ্ছি। তাই বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সরোজমিনে তদন্ত চাই আমি।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার আপন বড় ভাই আমিরুল ইসলাম ও ছোট ভাই সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফিরোজ খাতুন আমাদের ভাই যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সফি’র এর প্রথম স্ত্রী। বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে তাদের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছিল। তার প্রথম স্ত্রীর একটি সন্তান রয়েছে তার নাম ময়েন উদ্দিন। আমার ভাই এর স্ত্রী ও সন্তান হয়েও তারা আজ বেওয়ারিশের মত দ্বারে দ্বারে ঘুরছে । তার তাদের অধিকার ফিরে পেতে অভিযোগ করেছে। আমাদের এলাকায় না এসে অফিসে বসে তদন্ত করে নিজের মনের মত প্রতিবেদন দিচ্ছে তদন্ত কারী কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার ভূমি শহিদুল ইসলাম। তাই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সরেজমিনে তদন্তের জন্য অনুরোধ করছি।
এ বিষয়ে ফিরোজা খাতুনের বসবাসরত এলাকা দাড়ের পাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাকেব কমান্ডার হজরত আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খেজের আলী বলেন, ফিরোজ খাতুন( শুবারন) মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সুফি!র প্রথম স্ত্রী ও ময়েন উদ্দিন তার প্রথম সন্তান। আবুল কালাম আজাদ সফি সে দির্ঘ দিন যাবত দাড়ের পাড়ায় তার স্ত্রী ফিরোজ খাতুন কে নিয়ে তার শোশুর বাড়িতে বসবাস করেছেন আমরা জানি।
এ বিষয়ে ১০ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মহিউল ইসলাম মহি ও সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সফি, তার তারাগুনিয়া এলাকায় বাড়ি হলেও সে দাড়েপাড়া গ্রামের মৃত নিয়ামত মেম্বারের মেয়ে ফিরোজা খাতুন শুবারনের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের কারনে সে দাড়ের পাড়ায় দির্ঘ দিন বসবাস করেছেন। আমরা তাকে চিনি ফিরোজ খাতুন অরুফে শুবারন তার প্রথম স্ত্রী ও ময়েন উদ্দিন তার প্রথম সন্তান।
এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ সফি’র দ্বিতীয় স্ত্রী মিলাপজান নেছার এলাকা ভেড়ামারা উপজেলায় মির্জাপুর গ্রামের আব্দুল লতিবের ছেলে মুরাদ হোসেন ও হান্নান সহ একাধিক এলাকাবাসী বলেন, আমরা মির্জাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা আমরা জানতাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সফি’র মিলাপজান দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম পক্ষের একটি সন্তন রয়েছে। তার নাম ময়েন উদ্দিন সে তার পিতা আবুল কালাম আজাদ সফি’র সাথে দির্ঘ দিন যাবত আমাদের গ্রামে বসবাস করেছেন। ময়েন উদ্দিন সন্তানের স্বীকৃতি না পেলে তার প্রতি অবিচার করা হবে।
এ বিষয়ে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ সফি’র দ্বিতীয় স্ত্রী মিলাপজান নেছা বলেন, আমি সফি’র আর কোন স্ত্রী আছে কি না আমি জানিনা। তার কোন সন্তান আছে কিনা আমি জানিনা। আবুল কালাম আজাদ সফি’র আপনার স্বামী তার পিতার ও ভায়ের নাম কি এমন প্রশ্নের উত্তরে? মিলাপজান বলেন জানিনা ! বিয়ের পরে আমি কখন ও তাদের বাড়িতে যায় নাই, আমি আমার বাবা বাড়িতে বসবাস করি। তাদের কাউকে আমি চিনিনা।
স্বামীর পিতৃপরিচয় সহ সকল পরিচয় না জানলেও ঠিকই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছেন দ্বিতীয় স্ত্রী। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত চাই সকলে।
এ বিষয় অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি শহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমরা নিয়ম অনুসারে তদন্ত করেছি। সরেজমিনে তদন্ত করার কথা কিন্তু তাদের অভিযোগ আপনি নাকি অফিসে ডেকে নিয়ে আপনার মনের মত করে প্রতিবেদন দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে শহিদুল ইসলাম বলেন তদন্ত তো আসলে গোপন বিষয় এটা তো সবাইকে জানিয়ে করা ঠিক না।
Devoloped By WOOHOSTBD