চৈত্র সংক্রান্তির শেষদিনে সুনামগঞ্জের ছয়হারা গ্রামের আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী চড়কপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছয়হারা গ্রামবাসীর উদ্যোগে জেলার সর্ববৃহৎ চড়ক পুজায় ২৭০ জন নানান বয়সের সন্ন্যাসী ও ১০ জন তান্ত্রিক অংশ গ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের উন্মুক্ত প্রান্তরে হাওরের ফসল নিরাপত্তা ও বিশ্ব মানবের শান্তি এবং মানুষের রোগমুক্তি কামনায় প্রতিবছর গ্রামবাসীর উদ্যোগে গতকাল শনিবার ১৩ই এপ্রিল সকাল থেকে চড়ক পুজা শুরু হয়েছে। এই চড়কপূজায় ভুমি শয্যা, চড়কি ঘুরানো, খরগনৃত্য, জলশয্যা, তীর শয্যা, বড়সি ঘুরান, শিকশয্যা সহ বিভিন্ন কায়িক কসরত প্রদর্শন করা হয়।ঐতিহ্যবাহী নয়মৌজা এলাকার ছয়হারা, বিনাজুড়া, কামারগাও, গংগাধরপুর, রাজাপুর,মাতারগাও খুজারগাও, উজান-দৌলতপুর, ভাটি-দৌলতপুর,রাজাবাজ, লালপুর, তেঘরিয়া সহ ১২ টি গ্রামের মানুষ ও ফসলের মংঙ্গল কামনায় এসব গ্রামের হিন্দুধর্মাবলম্বী লোকজন ২০/২৫ দিন নিরামিষ খান। চড়ক পুজায় আগত সন্ন্যাসীরা জানান ১৯ চৈত্র থেকে গ্রামে চড়ক পুজার প্রস্তুতি শুরু হয়। ১৯ চৈত্র থেকে ৩০ চৈত্র দীর্ঘ ১২ দিন ২৬০ জন সন্ন্যাসী উপবাস এক আহারে খেয়ে পুজায় অংশ গ্রহণের জন্য তৈরী হন। এসময় তারা এক সংগে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে ভিক্ষান্ন গ্রহন করেন। পাকনার হাওরের ওই এলাকার ৮৯০ হাল ফসলি জমি, ১২ গ্রামের মানুষের রোগমুক্তি সহ বিভিন্ন মানত আদায় করেন। চড়কপুজায় পাশের জেলা নেত্রকোনা মদন ও খালিয়াজুড়ি এলাকার বেশ কয়েকজন সন্যাসী অংশ গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে সন্ন্যাসী বিভাগ তালুকদার জানান,এই চড়ক পূজার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে,হাওরের বোরো ধান পাকতে শুরু করেছে যেন প্রাকৃতিক কোন দূর্যোগ কৃষকদের ফসলের কোন ক্ষতি করতে না পারে,এবং শারীরিক তান্ত্রিক এবং ভক্তদের মনবাসনা পূরণের লক্ষ্যেই সেই বিশ্বাস থেকে প্রায় দেড়শত বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষজন এই পূজার আয়োজন করে থাকেন।
এ ব্যাপারে ছয়হারা গ্রামের কৃতি সন্তান ও ফেনারবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজল চন্দ্র তালুকদার বলেন,এই হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মের ভক্তরা মনবাসনা পূরণের জন্যই চৈত্র সংক্রান্তির এই দিনে মানস নিয়ে ছয়হারা গ্রামের মাঠে এই পূজায় উপস্থিত হন। তারা মানস করে পূজা দেন এবং সবাই আমরা শিবের আরাধনা করে থাকি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে সরকারের কারণে দেশ যেভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং হাওরের কৃষকরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করে যেভাবে দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা মিঠিয়ে যাচ্ছে সেইজন্যই কৃষকের ফসলের যেন এই সময়টাতে ক্ষতি না হয় সন্ন্যাসীরা তন্ত্রমন্ত্র করে থাকেন। তিনি সম্প্রীতির এই বাংলাদেশের সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করেন।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ থানার ওসি দিলীপ কুমার দাস বলেছেন আমি জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে যেমন আইন শৃংখলার দায়িত্ব তদারকির করতে আসায় আমার রথ ও দেখা হয়ে গেল আবার কলা ও বিক্রি হয়ে গেল । তিনি বলেন সনাতন ধর্মের অনুসারীরা দীর্ঘ দেড়শত বছর ধরে শিবকে বিশ্বাস করেন বলেই এই ছয়হারা গ্রামের হাওরে চড়ক পূজায় কয়েক হাজার ভক্তরা শিবের পূজায় অংশগ্রহন করেন।
Devoloped By WOOHOSTBD