— ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা
ইংরেজি নববর্ষের শেষ রাতে থার্টি ফার্স্ট নাইট কথাটি বেশি প্রচলিত। বাংলাদেশে এটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়।
এই দিনটিকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। কত মেয়ে সরল বিশ্বাসে তার সতীত্ব হারাবে, ধর্ষিতা হবে, কত যুবক প্রাণ হারাবে, নেশায় লিপ্ত হবে,,, এর জন্য শুধু ছেলে মেয়ে দায়ী নয়, পিতা মাতা, সমাজ ব্যবস্হা, ধর্মীয় অনুশাসন না মানা এবং সচেতনতার অভাব দায়ী।
আসুন আমাদের স্নেহের সন্তানদের কে রক্ষায় এইসব দিবস কে না বলি। আজো মনে পড়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মত অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো। এ দিবসকে কেন্দ্র করে পূর্বে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের সন্তানদের কে রক্ষা করতে হবে।
সারা দেশের ন্যায় ভেড়ামারাতে ও ব্যাপক আয়োজনের প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। মোড়ে মোড়ে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপের পিকনিকের স্পর্ট, আলোকসজ্জা, মাইক, সাউণ্ড সিষ্টেমে বাজানো হচ্ছে হিন্দি বাংলা সুপার হিট গান। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ও লক্ষ করা করা হয়।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম জানান, পুরো উপজেলায় কঠিন নজরদারির মধ্যে আছে। সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সুশৃঙ্খল পরিবেশ কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবেনা।
এই দিনটিকে কেন্দ্র করে পিকনিক, গান বাজনা, নাচ-গান, ডিস্কো কিংবা ডিজে, পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালনা, আনন্দ শোভা যাত্রা, তরুণ-তরুনীর রাতভর উল্লাস, মদ-বিয়ারসহ নানা মাদক দ্রব্য গ্রহণ করতে ওপেন কনসার্ট, লাইভ ড্যান্স, সংঙ্গীতানুষ্ঠানে অপসংস্কৃতি চর্চা এবং তরুণ-তরুনীদের প্রলুব্ধ করার জন্য থাকে নানা রকম আয়োজন। জীবন-নাশক নেশাদ্রব্য সাথে নিয়ে কতিপয় অবিবাহিত তরুণ-তরুনী কোলাহল মুক্ত, লোক চক্ষুর অন্তরালের স্থানগুলোতে মিলিত হয়। চরিত্রহীনরা বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার মাধ্যমে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করে। বিভিন্ন হোটেল মোটেল, বিনোদন স্পট ও সমুদ্র সৈকতগুলোতে বর্ণিল আলোক সজ্জায় আয়োজন করা হয় কনসার্ট। রাজনৈতিক অস্থিরতা যেভাবে বেড়েই চলছে তাতে কনসার্ট কখন যে ভয়াবহ কানসার্টে কিংবা ফটিকছড়িতে পরিণত হয় সে গুঞ্জন সবারই মাঝে।
তরুণ-তরুনীরা জোড়ায়-জোড়ায় রেস্তোরাঁ, পার্ক, উদ্যান, নাইট ক্লাব ইত্যাদিতে ঘুরে বেড়ায়। এ ভাবে ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশায় অপ্রীতিকর ঘটনা প্রায়শই ঘটছে।
গত কয়েক দিন থেকে মুখরোচক আলোচনা ছিল ক্রিকেট দলের পেসার রুবেল ও চলচ্চিত্র নায়িকা নাজনীন আক্তার হ্যাপীর রোমাণ্টিক গভীরতার ফোনালাপ ও অজানা জগতের নানা দিক। হ্যাপী যখন আনহ্যাপী হলো তখন সব ঘটনা একে একে মিডিয়ায় চলে আসছে। এরকম লাখো হ্যাপীরা নতুন বছরকে কেন্দ্র করে জড়িয়ে পড়ে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায়, তারা যখন হ্যাপী থাকে তখন আর সে কথাগুলো মিডিয়ায় আসে না। তাই বলে অপ্রিতিকর ঘটছে না তা বলা যাবে না। সবাই যেন দেখেও না দেখার ভান করছে। কিন্তু কেন ? সে প্রশ্ন থাকলো বিবেকের কাছে।
লেটেস্ট বিডি নিউজের তথ্য মতে, বসনিয়ার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পাঁচ দিনের শিক্ষা সফরে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিল ৭ শিক্ষার্থী। বাংলাদেশে যে হারে নগ্নতা ও ফ্রি সেক্স চলছে তাতে বসনিয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। একটু পেছনের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পারি ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাতে টিএসসি তে ‘বাঁধন’ এর শ্লীলতাহানি করে ১০/১২ জনের একটি দল। বিষয়টি নিয়ে তখন সংসদেও আলোচনা হয়েছিল। এটি সবারই মনে থাকার কথা। এ সকল অপসংস্কৃতির মাধ্যমে অশ্লীলতা জ্যামিতিক হাড়ে বেড়েই চলছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষে অশ্লীল নৃত্যের আয়োজনের পাশাপাশি অনুষ্ঠান স্থলের অভ্যন্তরে প্রকাশ্যে মাদক, নেশাদ্রব্য এবং এইডস থেকে বাঁচার নানা উপকরণ বিক্রি করার কথাও গণমাধ্যমে এসেছে। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মর্ডানের নামে তরুণ-তরুনীরা ‘মার্ডার’ হচ্ছে। থার্টি-ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে অশ্লীল-নৃত্য আর মাদকের ছড়াছড়ির কারণে ভ্রমণে যাওয়া ভদ্র পরিবারগুলো নানা সমস্যার সম্মুখীন হন। রাত যতই গভীর হয় কিছু কিছু শিল্পীদের ঘাড়ে সওয়ার হয় অভিশপ্ত শয়তান। আর শয়তানের প্রথম মিশন শুরু হয়েছিল আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) কে গন্ধম খাওয়ানোর পর জান্নাতি পোষাক খুলে দুনিয়ায় পাঠানোর মাধ্যমে। তারই ধারাবাহিকতায় আজো কতিপয় নারী শিল্পী নামক অর্ধনগ্ন বৈশিষ্ট্যের জীব (?) বিভিন্ন সময়ে নির্লজ্জভাবে হাজার-হাজার দর্শক শ্রোতা ও মিডিয়ার সামনে নামমাত্র পোশাকে উপস্থিত হয়ে থাকে। এর ফলে সর্বত্র বেড়ে যায় ইভটিজিংসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। বর্তমান বিশ্বের কোনো কোনো দেশে যে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে তারই একটি মিনি রূপ থার্টিফার্স্ট নাইট।
মানুষের চরিত্র এতটা নিচু হয়েছে যে, ছিনতাইকারীদের মতো কিছু সুযোগ সন্ধানী ও চরিত্র হরণকারী মানব আকৃতির কিছু দানব রয়েছে যারা প্রচ- ভীরের মধ্যে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নারীদের সংস্পর্শে আসতে চেষ্টা করে, কখনো একাকী কখনো সদলবলে। এ সকল চরিত্রহীনরা থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো পশ্চিমা দেশ থেকে আমদানি হওয়া বৈদেশিক উৎসবকে ঘিরে ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এই দানবদের থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি অভিভাবক ও সচেতন মহল ভেবে দেখবেন বলে আমার বিশ্বাস।
উশৃংঙ্খল নারীদের চাল-চলনকে অনেকেই নারীদের স্বাধীনতাকে বোঝাতে চাচ্ছেন, যা মোটেই সঠিক নয়। থার্টি ফার্স্ট নাইটের মতো নোংড়া সংস্কৃতি এদেশে আমদানী করেছেন কতিপয় জ্ঞানপাপীরা। শিক্ষাঙ্গনসহ সকল স্তরে নারী-পুরুষের অবাধ মেলা-মেশা, সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানী, মিডিয়ায় পশ্চিমা সংস্কৃতির পরিপালন আমাদের ছেলে-মেয়েদের সুস্থ সংস্কৃতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে পশুবৃত্তি মনোভাব।
এ কারণেই আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেই মানিকের মতো অসভ্যদের; যারা ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে বিকৃত আনন্দে মেতে ওঠে মিষ্টি বিতরণ করে। এদের মধ্য থেকেই বেড়ে ওঠে মা-বাবার হত্যাকারী ঐশীর মতো হাজারো ঐশী। এভাবে যুব সমাজকে ধ্বংস করার জন্য একটি গোষ্ঠী মরিয়া হয়ে উঠেছে। অভিভাবকদেরকে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে করে ছেলে-মেয়েরা বিপথগামী না হয় সে জন্য সন্তানদের সাথে কাউন্সিলিং করে বিভিন্ন দিবস পালনের উপকারিতা ও অপকারিতা বোঝাতে চেষ্টা করা। থার্টি ফার্স্ট নাইটে ঘুরতে না দেওয়ায় স্কুল ছাত্রীর আত্মহত্যা, পাখী ড্রেস না কিনে দেয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ ও বিষপাণে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ দিবসকে কেন্দ্র করে সকল নানা অনিয়ম আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে ঘটছে, কিন্তু নেই প্রতিকার, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের অনেকেই এসব অপকর্মে লিপ্ত থাকে। এসব তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে সহসা যে উত্তরটি পাওয়া যায়, আমাদের কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। মৌখিকভাবে জানালে হবে না, লিখিত অভিযোগ আসতে হবে।
এইসব এর জন্য শুধু ছেলে মেয়ে দায়ী নয়, পিতা মাতা, সমাজ ব্যবস্হা, ধর্মীয় অনুশাসন না মানা এবং সচেতনতার অভাব দায়ী।
আসুন আমাদের স্নেহের সন্তানদের কে রক্ষায় এইসব দিবস কে না বলি,,,,,।
অপসংস্কৃতির মাধ্যমে অশ্লীলতা জ্যামিতিক হাড়ে বেড়েই চলছে! স্নেহের সন্তানদের কে এই অশ্লীলতা থেকে রক্ষায়
থার্টি ফার্স্ট নাইট কে না বলি! এ দিবসকে কেন্দ্র করে চারিদিকে শুধু বাহারি আয়োজন।
প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর জন্য অনুরোধ রইল।
আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন এবং সমস্ত অশ্লীল অপসংস্কৃতি থেকে রক্ষা করুন।
Devoloped By WOOHOSTBD