— ডাঃ কামরুল ইসলাম মনা
ও বিধি তোমার খেলা মানুষের বুঝা বড় দায়! যখন যাকে ইচ্ছে কর আপন করে দাও, আবার যখন ইচ্ছে করে শূন্য কর বুক! হাসি গুলো কেড়ে নাও, দাও তুমি দুঃখ,,,,। তুমি পাশে নাই প্রিয়া তাই কষ্ট লাগে অতি,তুমি ছাড়া এ জীবনে নেই কোন গতি। রাতের আধার আর প্রকৃতির নিস্তব্ধতায় আমি একা জেগে থাকি। আকাশের কোন তারাটা আমার জাগার সাক্ষী থাকে জানিনা। বড়ই একা যেন আমি। মাঝে মাঝে জোনাকিরা আমার সাথে লুকোচুরি খেলে। তারাই যেন আমার সবচেয়ে আপনজন। ঝিঁঝিঁ পোকা বার বার ডেকে বলে রাত অনেক হয়েছে এখন ঘুমাতে যাও। কত ক্ষমতা মাখানো আদেশ ঠিক যেন আমার মায়ের মত। আমি বড় বেশি স্নেনের কাঙ্গাল। গোলাপের গন্ধে মুগ্ধ হয়ে স্পর্শ করতেই তার কোমল রূপ ছুঁতেই আমাকে কাটা ফুটিয়ে দিল। আমি আর ভুলেও গোলাপের কাছে যাব না। যদি আবার ও….।
এই যে, গভীর রাত। আমি জেগে কি করছি? হ্যাঁ মনে পড়েছে। একটা গল্প পড়েছিলাম আমার বান্ধবীর দেওয়া বইতে। সেটাই ভাবছি এখন আমার মত করে। মাধবী নামটা অবশ্য আমারই দেয়া। আমার কাছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। লিওনার্দোর মোনালিসা যদি বেঁচে থাকতো মাধবীর হাসি দেখে লজ্জা পেতো!
তবে জীবনানন্দ যেভাবে বনলতার রূপের বর্ননা করেছিল আমি সেভাবে পারবোনা, কারণ আমি তো কবি নয়। তবে তাকে দেখলেই বলতে ইচ্ছে করে তোমার এ সুন্দর রূপের রহস্য কি? হেনোলাক্স, ফেয়ার এন্ড লাভলী নাকি অন্য কিছু?
বড় বেশি ভালোবাসা তার জন্য আমার। বুকের ডান ডান পাশটায় মনে হয় সে সব সময়ই বসে থাকে। একদিন না দেখলেই আমি যেন পাগল হয়ে যায়। আমার পৃথিবীর অস্তিত্ব জুড়ে শুধু একজনই আমার মাধবী।
একেবারে নিবিড় পাশাপাশি বসতাম আমরা। কত আনন্দ কত দুঃখের কথা গল্প করে কাটিয়েছি অনেক সময়,অনেক দুপুর, বিকেল,কখনও বা আমার উপর রেগে গেলে তার নরম হাত দিয়ে পিঠের উপর আলতো করে মারতো। তৃপ্ত হতাম আমি,,। আমি ওর কথায় কখনও রাগিনি। কিন্তু ইচ্ছে করে মারতাম ওর গায়ে। কত যে মধুর দিন ছিল আমার।
সত্যিই ওর সাথে মারামারি করতে আমার খুব ভালো লাগতো। কখনো বা কোন কোন কথা কানে কানে বলতাম। হাতে হাত রেখে একদিন বলেছিলাম, আমাকে কষ্ট দিসনা। তোর কাছে এতটুকুই অনুরোধ আমার। ও বলেছিল তোকে কষ্ট দিতে পারবো না। শখের বসেও নষ্ট হাতে ওর শরীর স্পর্শ করিনি। ভুলেও সে সব ভাবিনি। গলা ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে একদিন সন্ধ্যায় আধারে বলেছিলাম। এই কাগজটা পড়ে নিস। সব কথা তো মুখে বলা যাই না। যদিও অনেক কিছুই বলেছি।
সবাই ভাবছেন ভালোবাসাকে তুই করে বলা এ আবার কি রকম অভদ্রতা, আমি বলবো তুইতে যে মজা আছে তুমিতে তা নেই। ভালোবাসা শুধুই ভালোবাসা তুই-তুমিতে পার্থক্য কিসের।
একদিন আমার পকেটে একটা সিগারেট দেখে মাধবী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলেছিল আর কোনদিন যেন না দেখি। স্পর্শ করবি না ওসব, তারপর থেকে স্পর্শ করতাম না বন্ধুদের শত তালে পরেও ঘৃণা করতে শিখেছিলাম ওই জিনিসটাকে।
দিনগুলোতো বেশ ভালোই কাটছিলো। আমার প্রিয় জিনিস গুলো ওকে উপহার দিয়ে আমি বড় বেশি আনন্দ পেতাম। ওকে ভেবেই কাটিয়েছি কত যে সকাল, দুপুর, বিনিদ্র রাত্রি,,,। এই চলার মাঝে যে মেয়েই আমার সাথে কথা বলতো ও তাকেই সন্দেহ করতো। এনিয়ে শত বিরোধ হলে সবগুলোর সাথে মেশা বাদ দেওয়ার পরও বিশ্বাস করতো না কারণ মাধবীও যে আমাকে তার জীবনের চেয়ে ও বেশি ভালবাসতো! যতই আমাদের ভালবাসা বৃদ্ধি পাচ্ছে ততই ওর সন্দেহ প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। এনিয়ে প্রায় ঝগড়াঝাটি হতো, হাজারো বার বুঝানোর পরও বুঝতে চাইতো না। মাধবীর একটাই কথা আমি ছাড়া কোন মেয়ের দিকে তাকাবে না, কথা বলবেনা,,,,। আমার ভাতিজার বিয়ের জন্য একটা মেয়ের মুখ দেখতে গিয়েছিলাম। মা এবং ভাই কে দেখানোর জন্য হবো বৌমার কাঁধে হাত দিয়ে ছবি তুলেছিলাম বলে সে কি তুমুল কান্ড,,,। হটাৎ করে আমার একটা চাকুরি হয়। চাকুরীতে যোগদানের ৩ দিনের মাথায় মাধবী জানতে পারে আমার বস একজন মহিলা। আমায় জিজ্ঞেস করে বস কেমন আমি সরল মনে বলেছিলাম পুষ্পোর মায়ের মত! অমনি শুরু হয় সাইক্লোন। সে বলে হয় চাকরি না হয় আমি,,,,। অভাবের সংসার। পরিবারে আমি ছাড়া উপার্জন করার আর কেউ নেই। আগে প্রাইভেট পড়িয়ে সংসার চালাতাম। চাকরি পাওয়ার পর প্রাইভেট পড়ানো ও বাদ দিয়েছি। পরিবারের কথা ভেবে চাকরি না ছাড়াই সে আমার সাথে আর কথা বলেনা, যোগাযোগ ও করেনা। আমার জন্য এখন আছে শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা,,,,,,,,। শেক্সপিয়ার যথার্থ বলেছিল- “অভাব যখন দরজায় এসে দাঁড়ায়, ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়”।
শুনেছিলাম যাকে বেশি ভালোবাসা যাই সেই বেশি কষ্ট দেয়। ঠিক মিলে গেল আমার বেলাতেও। প্রয়োজনে হয়ত সে একদিন কাছে এসেছিল আবার সময়ের প্রয়োজনেই হয়তো আমার থেকে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। তাতে আমার কোন ক্ষোভ নেই। বুকের ডান পাশটায় আজ চলার সাথি হারিয়েছে। মাধবীর একটা ছবি আছে আমার কাছে। দেখে দেখে সেই সব স্মৃতি ভাবলে নিজের অজান্তেই দুচোখে অশ্রু নেমে আসে। নিজ হাতেই তা মুছে নিই।মুছার মত কে আছে আমার? আমার মাধবীর শেষ দান যাকে সবাই ঘৃণা বলে। আমি ঘৃণা বলে অপমান করবো না। বুকের মাঝে আগলে রাখবো সযত্নে। চিরসুখী দেখতে চাই ওকে। ওর দুঃখ আমি সইতে পারবো না। ও যদিও আমার বুকটা কেটে একবার দেখতো আৎকে উঠতো হয়তবা। আমার সামনে না হলেও দুরে গিয়ে বলতো মানুষের জন্য এতো ভালোবাসা কিভাবে হয়। মুখে না হলেও মনে মনে বলতো ভালোবাসিরে তোকে ভালোবাসি আমিও।অনেক দেরিতে বুঝলাম আমি। কষ্টটা এভাবেই আসে। থেকে যায় এভাবেই,,,,,
Devoloped By WOOHOSTBD