• সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
চট্টগ্রামে ক্যাব বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে বক্তারা।। সীতাকুণ্ডে অগ্নিকান্ডে৬ বসতঘর পুড়ে ছাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহীদদের স্মরণে দোয়া ও আলোচনাসভা অনুষ্টিত লক্ষীপুর জেলা ডিবি পুলিশের এসআই আশরাফুলের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ নেলসন ম্যান্ডেলা শান্তি পুরস্কার ২০২৪ পেলেন সুনামগঞ্জের রাকিব আলী সীতাকুণ্ডে সড়ক দূর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু  দৈনিক হালচাল পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পেলেন সাইফুল ইসলাম মধ্যনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই ব্যাবসায়ীকে জরিমানা ফ্রান্সে নানা আয়োজনে উদ্বোধন হলো বাংলা ম্যারেজ ব্যারো তাহিরপুরে নানা আয়োজনে প্রতিবন্ধী দিবস পালিত

ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত

Zakir Hossain Mithun / ৩৬৭ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত

হালচাল নিউজ ডেস্ক –
আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী দিন। শীতের রুক্ষ, হিমেল দিনের অবসান ঘটিয়ে প্রকৃতিতে এসেছে বসন্ত। এত রূপ, রস, আর লাবণ্য নিয়ে প্রকৃতিতে আর কোনো ঋতু হাজির হয় না। তাই বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ।
ঋতুরাজ বসন্ত আসে নানা রঙ ছড়িয়ে। প্রকৃতি খুলে দেয় তার দক্ষিণ দুয়ার। বসন্তের আগমনে কোকিল গান গায়। ভ্রমর খেলা করে। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। প্রকৃতির এই রূপে দেওয়ানা হয়ে কবিরা রচনা করেছেন অনেক চরণ। ‘আজি এ বসন্ত দিনে বাসন্তী রঙ ছুঁয়েছে মনে; মনে পড়ে তোমাকে ক্ষণে ক্ষণে চুপি চুপি নিঃশব্দে সঙ্গোপনে’- এ রকম অনেক চরণ রচিত হয়েছে বসন্তকে নিয়ে।
নানা কারণে এখন পরিবর্তন এসেছে প্রকৃতিতে। কোনো ঋতুই এখন আর আগের মত নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যি বহন করে না। শীতকালে শীতের দেখা নেই। বর্ষায় বৃষ্টি মেলে না। এসব দেখেই হয়তো কবি চরণ লিখেছেন এভাবে ‘ফুল ফুটক আর না-ই ফুটক আজ বসন্ত’। অথবা কবিকে স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে বসন্তের আগমনের কথা ‘হে কবি! নীবর কেন-ফাগুন যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?’
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের পঙক্তি তাতে কী? ‘ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক, আজ বসন্ত…।’ আজ বসন্ত, আজ পহেলা ফাল্গুন।
১৫৮৫ সালে মোঘল সম্রাট আকবর ১৪ টি উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। যার মধ্যে একটি ছিল ‘বসন্ত উৎসব’। এরপর ১৪০১ বঙ্গাব্দ থেকে এই উৎসব উদযাপনের রেওয়াজ শুরু হয়। সেই থেকে ‘জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ’ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। ‘ছায়ানট’ বসন্ত উৎসব শুরু করে ১৯৬২ সালে। দিনে দিনে তা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
স্বাগতম বসন্ত। প্রাণ খুলে তাই যেন কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়, ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে/এত বাঁশি বাজে/এত পাখি গায়…।’ রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত গানের আকুতি যেন ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে- ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/আমার আপনহারা প্রাণ/আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ/তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান/তোমার অশোকে কিংশুকে/অলক্ষ্যে রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে…।’
কোকিলের কুহুতান, দখিনা হাওয়া, ঝরাপাতার শুকনো নূপুরের নিক্কণ, প্রকৃতির মিলন এ বসন্তেই। বসন্ত মানেই যে পূর্ণতা। বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত মানেই একে অপরের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের এ ঋতু বাসন্তী রঙে সাজায় মনকে, মানুষকে করে আনমনা।
শীতের জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিময় বাতাস জানান দেয় নতুন লগ্নের। ফাল্গুনের আগমনে পলাশ, শিমুল গাছে লেগেছে আগুনে খেলা। মধুর বসন্তের সাজ সাজ রব সর্বত্র। পুরো প্রকৃতিতে চলছে ‘মনেতে ফাগুন এলো…’ আবহ।
ঋতুচক্র এখন পঞ্জিকার অনুশাসন মানতে নারাজ! কুয়াশার চাদরে মোড়া শীত জেঁকে বসতে না বসতেই বিদায়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুচক্রেও এসেছে নতুন ব্যঞ্জনা। সময়মতো শীত আসে না, বর্ষাও তা-ই। গ্রীষ্মের খরতাপও মানে না নিয়ম। এসবের মধ্যেও অনেকটা স্বমহিমায় দীপ্যমান বসন্ত। প্রকৃতির এ আনন্দবার্তায় নাগরিক মনও তাই উচ্ছ্বসিত।
বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি অনাদিকাল থেকেই। কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায় আছে বসন্তের বন্দনা। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে নানা অনুপ্রাস, উপমা ও উৎপ্রেক্ষায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিক বাউল কবির মনকেও বার বার দুলিয়েছে, দোলাচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। সেজন্যই বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের সুবাসে মন আনচান করে বাউল কবির।
গ্রামের মেঠোপথ, নদীর পাড়, গাছ, মাঠভরা ফসলের ক্ষেত বসন্তের রঙে রঙিন। চোখ বুজলেও টের পাওয়া যায় এমন দৃশ্যপট। নাগরিক ইট-পাথরের জীবনে বসন্ত এসেছে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ ও অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে। কংক্রিটের নগরীতে কোকিলের কুহুস্বর ধ্বনিত হবে ফাগুনের আগমনে।
‘বসন্ত ছুঁয়েছে আমাকে/ঘুমন্ত মন তাই জেগেছে…।’ যেন তাদের ‘হারিয়ে যেতে আজ নেই মানা।’
‘বাসন্তী তরুণী’রা খোঁপায় গাঁদা, পলাশসহ নানা ফুল গুঁজে আর ‘বসন্ত তরুণ’রা পাঞ্জাবি ও ফতুয়ায় নতুন করে নিজেদের সাজিয়ে নেমে আসবে পথে পথে। মোবাইল ফোনে এসএমএস আদান-প্রদান, ফেসবুক, টুইটার প্রভৃতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছা জানানোর মধ্য দিয়ে বরণ করা হবে ঋতুরাজ বসন্তকে।
গ্রামেও এখন ফাগুনের ছোঁয়া। গাঁয়ের বধূরা আজ আঙিনা লেপে বরণ করে নেবে ফাগুনকে। তুলে রাখা হলদে শাড়িও বের করবে আজ। শুরু হবে বোরো চারা রোপণের পালা। মাঘের শীতে আবাদের মাঠে যেতে পারেননি কৃষক। ফাগুনের দিনে তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই যেতে পারবেন। বসন্ত সবার হৃদয়ে এনে দেয় ফাগুনের দোলা।
বসন্ত মননে, চেতনায় ও সংগ্রামী প্রত্যয়ে বাঙালির প্রতিবিম্ব হোক, বিনাশ হোক সব অশুভ! পূর্ণতায় বসন্তের দোলা ছড়াক সর্বত্র, পৃথিবীর সব মানুষের ঘরে।
বাংলাদেশে সর্বজনীন উৎসব হিসেবে যে দিনগুলোকে ধরা হয়, তার মধ্যে পহেলা ফাল্গুন একটি। সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ নির্বিশেষে এই দিনটি উৎযাপন করেন।
প্রকৃতি তার রঙ বদলাবে। বিদায় নেবে বসন্ত। খুব দ্রুতই যেন চলে যায় এ রাজঋতুটি। গর্জে ওঠে প্রকৃতি, বর্ষে বারিধারা। তাই কবিরও আক্ষেপ- ‘কেন রে এতই যাবার ত্বরা-বসন্ত, তোর হয়েছে কি ভোর গানের ভরা।’

ফুল ফুটক আর না-ই ফুটক আজ বসন্ত


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Devoloped By WOOHOSTBD