• বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবামূল্যায়ন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির কমিটির পূর্ণ গঠনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ভেড়ামারা অনলাইন প্রেসক্লাবের উদ্যোগে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী প্রচার ক্যাম্পে বহিরাগতরা হামলা বিশ্বম্ভর পুরে ইরা সংস্থার মালালা ফান্ডের মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষায় আর্থিক সহায়তা বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত ভেড়ামারায় বিদ্যুৎ এর তামাকের অফিস ভাংচুর লুটপাট এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত করেছে কতিপয় দুর্বৃত্তর ভেড়ামারায় পূর্ব শত্রুতার জেরে নাসিমের মা স্ত্রীর উপর হামলা! লুটপাট গাড়ি ও মিটার ভাংচুর ভেড়ামারায় জমির উদ্দিন এর বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট ভেড়ামারায় জনপ্রিয় গণমাধ্যম দেশ চ্যানেল এর চতুর্থ বর্ষ পালিত ভেড়ামারায় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক আয়োজিত অসহায় দুস্থ শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ দিরাইয়ের কুলজ্ঞ গ্রামে কৃষিকাজে বাধাঁ,চাষাবাদের যন্ত্রাংশ ছিনিয়ে নেওয়াসহ হুমকি,থানায় অভিযোগ দায়ের

নওগাঁয় আদীবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যা ও বিচার হয়নি ২০ বছরেও

Muntu Rahman / ৩০৮ Time View
Update : শনিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৩

নওগাঁয় আদীবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যা ও বিচার হয়নি ২০ বছরেও

নাজমুল হক , নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:- আদিবাসী নেতা ৩৬ বছর বয়সী আলফ্রেড সরেনের ২৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গত শুক্রবার। ২৩ বছর আগে সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন আলফ্রেড সরেন । তবে ঘটনার ২৩ বছর হলেও এখনও মামলার কোনো সুরাহা হয়নি। আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত এ মামলার ভবিষ্যত নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে রয়েছে সংশয়। পল্লি ছেড়ে মামলার অনেক সাক্ষীরা চলে যাওয়ায় আলফ্রড সরেনের মামলার ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান হত্যা মামলার বাদী আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এ মামলায় জামিনে থাকা আসামিরা তাদের অব্যাহতভাবে হুমকি দেয়ায় ইতোমধ্যে অনেক আদিবাসী পরিবার ভীমপুর আদিবাসী পল্লি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। বর্তমানে যে ১২টি পরিবার এখনও বসবাস করছে তারা ভূমিদস্যুদের ভয়ে জমিতে চাষাবাদ করতেও পারছে না। ফলে চরম অভাব ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন তারা।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিস্তব্ধ পল্লিটিতে আগের মতো আর প্রাণচাঞ্চল্য নেই। ঝোপঝাড়ের মধ্যে যে কয়েকটি পরিবার এখনো বসবাস করছে তারাও বেশ ভীত। রেবেকা সরেন ও তার ছোট ভাই মহেশ্বর সরেন শত হুমকির মধ্যেও সেখানে রয়েছেন শুধু তার ভাইয়ের হত্যার বিচার দেখে যাওয়ার অপেক্ষায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিদের অব্যাহত হুমকিতে ২৪টি পরিবারের মধ্যে বর্তমানে নতুন ও পুরাতন মিলে সেখানে বসবাস করছে মাত্র ১২টি পরিবার। বাকিরা প্রাণভয়ে অন্যত্র চলে গেছে।পল্লির এক ধারে বাঁশঝাড়ের ছায়ায় অযত্নে পড়ে রয়েছে আদিবসী নেতা আলফ্রেড সরেনের সমাধি। এখানকার আদিবাসীদের চোখে-মুখে আতংকের ছাপ।

 

যে ভাবে হত্যা করা হয় আলফ্রেড কে,

আলফ্রেডের ছোট বোন রেবেকা সরেন সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, গত ১৮ আগস্ট ২০০০ সালে ভীমপুর আদিবাসী পল্লিতে ভূমিদস্যু হাতেম, গদাই গংদের সন্ত্রাসীদের হামলায় তার ভাই আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন নৃসংশভাবে খুন হন। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়ে আদিবাসী পল্লির ১১টি পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটসহ অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তাদের হামলায় আদিবাসী নারী ও শিশুসহ প্রায় ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়। ঘটনার সময় আদীবাসীদের কয়েকটি শিশুকে পল্লির পার্শ্ববর্তী পুকুরে নিক্ষেপ করে সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রসীরা যখন আদিবাসী পল্লিতে হামলা চালায় তখন বেলা ১২টার মতো বাজে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিনটি ছিল শুক্রবার। ওইদিন নওগাঁ-মহাদেবপুর সড়কের চৌমাসিয়ার মোড়ে জুম্মার নামাজের পর ভীমপুরের আদিবসীদের ওপর ভূমিদস্যুদের অত্যাচারের প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করে আদিবাসীরা। আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন সবকিছুর আয়োজন করে বেলা ১২টার দিকে বাড়িতে যান ভাত খেতে। পল্লির অধিকাংশ পুরুষ ওই সময় চৌমাসিয়ার মোড়ে সমাবেশ স্থলেই ছিলেন, ফলে গ্রাম ছিল পুরুষশূন্য। আলফ্রেড বাড়িতে যেতেই সন্ত্রাসী বাহিনী সেই সুযোগটি নেয়। টের পেয়ে নিজের ঘর ছেড়ে অন্য ঘরে আশ্রয় নেন আলফ্রেড। আলফ্রেড যে ঘরটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই ঘরটিতে তারা আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘর থেকে আলফ্রেডকে বের হতে বাধ্য করে।

আলফ্রেড বেরিয়ে আসামাত্র ঘাতকরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। অবশ্য তাকে যেকোনো সময় হত্যা করা হতে পারে- এমনটি আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন আলফ্রেড সরেন। তাই ওই সন্ত্রাসী ঘটনার সময় রেবেকা সরেন তার ভাতিজী আলফ্রেড সরেনের মেয়ে ঝর্ণাকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে থাকতে সক্ষম হন। তবে সন্ত্রাসীদের আঘাতে আলফ্রেডের স্ত্রী জোছনা সরেনের একটি চোখ মারাত্মকভাবে জখম হন। পরবর্তীতে তাদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হলেও পরে তা গুটিয়ে নেয়া হয়।

৯ আগস্ট ২০০০ সালে নওগাঁর মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আন্তর্জাতিক আদিবসী দিবসে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের দিন তাকে হত্যা করা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় নওগাঁর সিপিবি নেতা ময়নুল হক মুকুল, মহসীন রেজাসহ আরও কয়েকজন তাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।

অ্যাডভোকেট মহসীন রেজা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঠিক আগের দিন ১৭ আগস্ট আলফ্রেড মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা দেওয়ান আমজাদ হোসেন তারাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তাকে যারা হত্যা করতে পারে, এমন সন্দেহভাজন ১০ জনের নাম ছিল।

আদিবাসীদের ডাকা চৌমাসিয়ার মোড়ে সেই সভায় সেদিন বক্তব্য দেয়ার জন্য উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ সিপিবির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল হক মুকুল। তিনি সেদিনের ঘটনার কথা তুলে ধরেন এভাবে, ‘তখন দুপুর সাড়ে ১২টা হবে। হঠাৎ আমার নজর চলে যায় ভীমপুর গ্রামের দিকে। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি কুণ্ডলি পাকিয়ে ওই গ্রামের উপর ধোঁয়া উঠছে। আমি সবাইকে সেটা দেখতে বলি। আগুন দেখতে পেয়ে মাঠ ভেঙে গ্রামের উদ্দেশে দৌড় দেয় আদিবাসীরা। চৌমাসিয়ার মোড় থেকে গ্রামটি ভালভাবে দেখা যায়। আমিও আদিবাসীদের পিছু পিছু গ্রামে গিয়ে উপস্থিত হই। এসে দেখি সব শেষ।

‘আমি মহসীন রেজা, শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপনসহ আরও কয়েকজনকে খবরটা জানিয়ে দেই। তবে আমার কাছে অবাক লেগেছে, সেদিন পুলিশের তৎপরতা দেখে। পুলিশ কীভাবে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হলো? তখনই আমার ধারণা হয়েছিল পুলিশকে ম্যানেজ করেই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল হাতেম-গদাই গং। পুলিশ সেখান থেকে তড়িঘড়ি করে আলফ্রেডের মরদেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমি আদিবাসীদের নিয়ে বাধা দেই। পুলিশকে বাধ্য করি লাশের ময়নাতদন্তেরর জন্য।’

মামলার বর্তমান অবস্থা

আলফ্রেড সরেন হত্যার ঘটনায় তার ছোট বোন রেবেকা সরেন বাদী হয়ে হত্যা ও জননিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন।

মামলায় পুলিশ ৯১ জন আসামির নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এর মধ্যে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ওই সময় নওগাঁ দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সেসময় ৪১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছিল।

২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর জননিরাপত্তা আইন বাতিল করে জোট সরকার। ওই সময় পলাতক শীতেষ চন্দ্র ভট্টাচার্য ওরফে গদাই (বর্তমানে প্রয়াত) ও হাতেম আলীসহ ৬০ জনের অধিক আসামি জননিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে মামলাটি হাইকোর্ট ৩ মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন। এরপর আসামিরা জামিনে বেরিয়ে আসেন।

 

এ বিষয়ে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্র নাথ সরেন বলেন, ‘আমি চাই আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে যতদ্রত সম্ভব নিষ্পত্তি করা হোক। মামলাটি দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকায় অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আসামিদের হুমকির ভয়ে অনেক সাক্ষী ভীমপুর আদিবাসী পল্লি ছেড়ে চলে গেছে।’
বাসদের নওগাঁ জেলার আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল আক্ষেপ করে বলেন, ‘২৩ বছরেও ওই মামলার নিস্পত্তি হলো না। অথচ বিষয়টি ছিল স্পর্শকাতর।’

নওগাঁ জেলা সিপিবির সভাপতি মহসীন রেজা বলেন, ‘দখলকৃত জমি ভূমিহীন ও আদিবাসীদের ফেরত দিয়ে পূর্ণ নিরাপত্তাসহ তাদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন। ওই এলাকায় প্রচুর সরকারি খাস সম্পত্তি রয়েছে। সেখানে আদিবাসী ও ভূমিহীনদের দখলে রয়েছে মাত্র ৩০ বিঘার মত জমি।’
এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহসীন রেজা জানান, বর্তমানে আলফ্রেড সরেন হত্যা মামলাটি আপিল ডিভিশন শুনানি নিষ্পত্তি করে পুনরায় পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে প্রেরণ করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

Devoloped By WOOHOSTBD