জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে নিশ্চিন্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেট ব্যবহারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিষেধ করার পাশাপাশি মারধর এর অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই স্কুলের শিক্ষিকা নাহিদ পারভীন ও সাবিনা-২ এর বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের স্কুলের টয়লেট ব্যবহার করতে না দেওয়ায় স্কুলে আসার পূর্বে কিংবা ক্লাস চলাকালীন সময়ে টয়লেট এর প্রয়োজন পড়লে বাসায় গিয়ে টয়লেট সেরে এসে আবার ক্লাস করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও বেশি টয়লেট এর চাপ পড়লে প্রসাবখানায় গিয়ে টয়লেট করতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওইসব কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবরা।
ওই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র মেহেরাব হোসেনের মা মোসলেমা খাতুন সাংবাদিকদের অভিযোগ করে জানায়, গত বুধবার তার ছেলে মেহেরাব হোসেন প্রতিদিনের ন্যায় স্কুলে যায়। স্কুল চলাকালীন সময়ে তার টয়লেট এর চাপ দিলে সে তার ক্লাসের শিক্ষিকা নাহিদ পারভীনকে বলে টয়লেটে যাবে এসময় ওই শিক্ষিকা তাকে বলে বাসায় গিয়ে টয়লেট করে আসো। অতিরিক্ত চাপের কারণে তার ছেলে স্কুলেই টয়লেট করে কাপড় নষ্ট করে। এর পর বাসায় আসলে তার মা কাপড় ও জুতা ধুয়ে পরিষ্কার করে দেন। জুতা না শুকানোর কারণে পরদিন অন্য জুতা পরে স্কুলে গেলে তাকে বেধরভাবে মারধর করে শিক্ষিকা নাহিদ পারভীন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের তারাকুল গ্রামে অবস্থিত নিশ্চিন্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলে দুইটি টয়লেট ছিল। একটি শিক্ষার্থীদের এবং অপরটি শিক্ষকদের। তবে স্কুলে দৃশ্যমান শিক্ষকদের টয়লেটটি দেখা গেলেও শিক্ষার্থীদেরটা গত ১ মাস আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। সে সময় থেকেই তাদের ব্যবহারের জন্য বিকল্প কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। স্কুলের প্রসাবখানা ঘুরে দেখা মিলেছে শিক্ষার্থীদের মল। স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই স্কুলে প্রথম শ্রেণী হতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ১৩০ জন শিক্ষার্থী আছে এবং শিক্ষক রয়েছে ৭ জন।
এব্যপারে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, আমার স্কুলে নতুন বিল্ডিং হবে এজন্য আমাদের টয়লেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে স্যারদের ব্যবহারের যে টয়লেট আছে সেটি আমাদের ব্যবহার করতে দেয় না। আমরা বাসা থেকে আসার সময় টয়লেট করে স্কুলে আসি। আবার স্কুল চলাকালীন সময়ে টয়লেট চাপলে বাসায় গিয়ে টয়লেট করে আসি। তারা আরো জানায় পড়া না হলে আমাদের শিক্ষিকা নাহিদ পারভীন ও সাবিনা-২ খুব মারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানায়, এই স্কুলে কর্মরত শিক্ষিকারা নিজেদের বিশাল কিছু ভাবেন। বাচ্চাদের ভালোভাবে ক্লাস নেয় না। এতো ছোট বাচ্চাদের মারধর করার কারণে তারা ভয়ে স্কুলে যেতে চায়না। স্কুলের শিক্ষিকাদের ছেলে মেয়েরাও এখানে পড়ে তারা তাদের নিয়েই ব্যস্ত। স্কুলে বাচ্চাদের টয়লেট পর্যন্ত করতে দেয়না। তাহলে সরকারি একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে টয়লেট এটি কাদের ব্যবহারের জন্য। তারা আরো বলেন, স্কুলের শিক্ষিকা নাহিদ পারভীন ও সাবিনা-২ এর আচরণ খুবই বাজে। কিছু বলতে গেলে তারা খুবই বাজে আচরণ করে যা খুব দুঃখ জনক। ওই স্কুলের অভিযুক্ত শিক্ষিকা নাহিদ পারভীন ট্রেনিং এর কারণে বাহিরে থাকায় মুঠোফোনে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে টয়লেট ব্যবহারে নিষেধ করিনি কিংবা মারধর করিনি। আমি যে মেরেছি তার কি প্রমান আছে।
অভিযুক্ত অপর শিক্ষিকা সাবিনা-২ বলেন, আমি বাচ্চাদের মারধর করিনা। আর টয়লেট করার বিষয়েও কাউকে নিষেধ করিনি। প্রধান শিক্ষক অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় এবিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের স্কুলে নতুন বিল্ডিং হবে এজন্য টয়লেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। একটি আছে সেটিও ভেঙে ফেলা হবে। তবে আমার জানা মতে স্কুলের টয়লেট ব্যবহারে কেউ শিক্ষার্থীদের নিষেধ করেনা। সবাই ব্যবহার করে। আমাদের প্রধান শিক্ষক অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় আমি দায়িত্ব পালন করছি তবে আমাকে শুধু দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর্থিক ক্ষমতা না দেওয়ায় আমি শিক্ষার্থীদের জন্য বিকল্প টয়লেট এর ব্যবস্থা করতে পারিনি। তবে প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি অবগত করেছি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হাসেম মন্ডল বলেন, শিক্ষিকা নাহিদ পারভীন এর ব্যবহার একটু খারাপ। আমি যথেষ্ট বুঝিয়েছি। আসলে সবাই মহিলা শিক্ষিকা হওয়ার কারণে এমন জটিলতা। দ্রুত স্কুলের নতুন বিল্ডিং ও টয়লেট এর কাজ করা হবে। আশা করি তখন আর সমস্যা থাকবে না।
এ বিষয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোজাম্মেল হক শাহ বলেন, শিক্ষকদের টয়লেটও শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারবে। হয়তো তাদের বলতে পারে একটু পানি বেশি ব্যবহার করতে। কিন্তুু শিক্ষার্থীদের যদি টয়লেট ব্যবহার করতে না দিয়ে থাকে তবে সেটা নিচু মনের পরিচয় বহন করে। যদিও আমি এ বিষয়ে কারো অভিযোগ পাইনি তবে যেহেতু জানালেন আমি বিষয়টি দেখবো। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মারধর এর বিষয়ে তিনি বলেন কোন শিক্ষার্থীদের মারধর করার আইন আমাদের নেই।
Devoloped By WOOHOSTBD