আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই মেয়র আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়েও বেশি অনিয়ম হয়েছে, ভোটের অনিয়ম না, আমাদের নেতা-কর্মীদের অনিয়ম হয়েছে গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে। ১০-১৫ জন, ২০ জন নারী এনে ৫০০ টাকা ৫০০ টাকা করে দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কোনো অফিসার কিংবা আমরা যখন যাই, সেখানে তখন তাঁদের দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভোট হয়েছে এই সিস্টেমে। মিথ্যা কথা বলেছি?…না। এবারের নির্বাচনে (উপজেলা পরিষদ) ওনারা (কাদের মির্জার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী) অনিয়ম করেনি? চর কাঁকড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে এক ছেলে আমাদের সাথে থেকে ১০০ ভোট একসাথে মেরেছে দোয়াত-কলম প্রতীকে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে টাকা দিয়ে নারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় বলেও মন্তব্য করেছেন, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।
দেশের চলমান ভোটদান প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।
গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৫ আসন থেকে টানা চতুর্থ-বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও অন্যান্য দল নির্বাচন বর্জন করলেও ওবায়দুল কাদেরের বিপক্ষে স্ব-নিয়ন্ত্রিত জাতীয় পার্টিসহ অখ্যাত বিভিন্ন দলের চারজন প্রার্থী ছিলেন।
শুক্রবার (০৭ জুন ) বিকেলে বসুরহাট পৌরসভা মিলনায়তনে উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় কাদের মির্জা ওই মন্তব্য করেন। কাদের মির্জার বক্তব্যটি দলের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে লাইভে প্রচার করেন।
ওবায়দুল কাদেরের ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাদের সমাজ থেকে একটা জিনিস আমরা দূর করতে পারিনি। সেটা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে। এ থেকে আমাদের সমাজকে রক্ষা করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। যে শিক্ষকদের সবচেয়ে বেশি সম্মান করতো দেশের মানুষ, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আজকে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিতে ডুবে আছে ।’
কাদের মির্জা পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘থানায় গিয়ে কারও ইজ্জত-সম্মান থাকে না। টাকা দেবেন, আপনি ভদ্রলোক। টাকা দেবেন না আপনি বের হয়ে যান। একটা সালিসও তারা শেষ করতে পারে না। থানায় ঘুরতে ঘুরতে মানুষের স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়ে গেছে। বিচার নাই। মানুষ আজকে বিচার পায় না। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এটার বিকল্প নেই। ন্যায় কথা বলতে গিয়ে নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে যদি যায়, সে কথা বলতে হবে নবনির্বাচিত তিন জনপ্রতিনিধিকে।’
বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘অন্যায়কারী আপনাদের ভাই হলেও তাকে কোনো দিন প্রশ্রয় দেবেন না। আমি আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে ইলেকশন করেছি, ওপরে আল্লাহ জানে। আমি করেছি মনেপ্রাণে। আমি করেছি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বেয়াদবির জন্য। আমার সাথে বেয়াদবির জন্য। আমরা যখন যার জন্য কাজ করি ইমানদারির সাথে করি।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবদুল কাদের মির্জা ছাড়াও নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল , ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন বাবর, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারভীন আক্তার( পারভীন মুরাদ)সহ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।
বিগত ২৯ মে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জে ভোট হয়। এতে কাদের মির্জার ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন। তবে কাদের মির্জা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বলে সমর্থন দেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী ব্যবসায়ী গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুলকে।সেদিন তারই ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত তাকে তার নিজ ভোট কেন্দ্র “উদয়ন প্রি- ক্যাডেট স্কুল ” থেকে বের করে দিয়ে ভোট দিতে না দেয়ার অভিযোগ করেন,মেয়র কাদের মির্জার বিরুদ্ধে। এছাড়াও কেন্দ্র দখল করে এজেন্ট ফরম ছিঁড়ে এজেন্টদের বের করে দিয়ে
ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার অভিযোগে ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত,উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান বাদল, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুন হোসেন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা বেগম পারুল সকাল ১০ টায় ভোট বর্জন করে ছিলেন।
Devoloped By WOOHOSTBD